অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে সাহায্যের পরিমাণ সীমিত


সিরিয়ার আলেপ্পোতে ভূমিকম্পের পর একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে জীবিত ব্যক্তিদের সন্ধান করছে আলজেরিয়ার উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩।
সিরিয়ার আলেপ্পোতে ভূমিকম্পের পর একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে জীবিত ব্যক্তিদের সন্ধান করছে আলজেরিয়ার উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩।

উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব এবং আলেপ্পোতে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে বুধবার দুটি শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। গত সোমবার দক্ষিণ তুরস্ক এবং এর উত্তরে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়াতে আঘাত হানা বিশাল ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরল সুসংবাদ।

কিন্তু ভূমিকম্পের পর তুরস্কে যখন বেশ জোরেশোরে মানবিক অভিযান চলছে তখন অন্যদিকে, সিরিয়ায় অনুরূপ প্রচেষ্টা সবেমাত্র শুরু হয়েছে।

হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স ’এর সমন্বয়ক দপ্তর বা ওসিএইচ এর মুখপাত্র জেনস লায়েরকে সতর্ক করে বলেছেন, তুরস্ক এবং তার উত্তর প্রতিবেশীর মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ত্রাণ কর্মীদের জন্য সিরিয়ার সংকট মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে অসুবিধা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

তিনি বলেন, "বিষয়টিকে একটি মানবিক সংকট হিসাবে দেখাটা সবার জন্য খুবই অপরিহার্য, অনুগ্রহ করে এটি নিয়ে কোনো রাজনীতি করবেন না। আসুন, আমরা এমন লোকদের সাহায্য করি যাদের সাহায্যের খুব প্রয়োজন।"

লারকে উল্লেখ করেছেন, ভূমিকম্পের পর সাময়িকভাবে তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় আন্তঃসীমান্ত সাহায্য কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছাতেও বাধা দেয়া হচ্ছে।

এই কর্মতত্পরতা ২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এটি সিরিয়ার বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের জন্য একটি জীবন-মরণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ সরকার-নিয়ন্ত্রিত ওই এলাকা থেকে সাহায্য করার গাড়ী বহরগুলি সংঘর্ষের রেখা অতিক্রম করে না।

আনুমানিক ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে, যা গত প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। সর্বশেষ প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ১১,০০০-এর বেশি হলেও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মৃতের সংখ্যা প্রায় ২০,০০০-এ ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছে।

সিরিয়ার ১২ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির অভ্যন্তরে ৬৮ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় চল্লিশ লাখেরও বেশি মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র ম্যাথিউ সল্টমার্শ বলেছেন, শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনারের কাছে অতি প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ রয়েছে এবং "ইতোমধ্যেই কম্বল, গদি, প্লাস্টিকের চাদর, গরম কম্বল এবং তাঁবুর মতো অতি প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে।"

তিনি উল্লেখ করেছেন, ভূমিকম্পে আঘাতপ্রাপ্ত কিছু স্থান প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং সেখানে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। “সেই সাথে এই অঞ্চলে আঘাত হানা তীব্র শীতের ঝড় ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে”।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্টকে সহায়তা করছে। সংস্থাটি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ফেডারেশন তুরস্ক এবং সিরিয়ার মারাত্মক ভূমিকম্পে সাড়া দেওয়ার জন্য ২০ কোটি ডলারেরও বেশি সাহায্যের আবেদন করেছে। অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলিও তাদের অনুসরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০১১ সালের মার্চ মাস থেকে সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের কথিত লঙ্ঘনের তদন্ত করছে জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক কমিশন। সংস্থাটি মানবিক কর্মী এবং উদ্ধারকারীদের আক্রমণের ভয় ছাড়াই প্রয়োজনে তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি ব্যাপক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

XS
SM
MD
LG