অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া বিরোধী সহিংসতা: ছয়টি মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ৮১ জন


ফাইল ছবি-পঞ্চগড় শহরে কাদিয়ানি বা আহমদিয়া মতাবলম্বীদের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে মুসল্লি ও পুলিশের সংঘর্ষ।
ফাইল ছবি-পঞ্চগড় শহরে কাদিয়ানি বা আহমদিয়া মতাবলম্বীদের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে মুসল্লি ও পুলিশের সংঘর্ষ।

বাংলাদেমের পঞ্চগড়ে শুক্রবার (৩ মার্চ)আহমদিয়া সম্প্রদায়ের(কাদিয়ানি) ‘সালানা জলসা’ অনুষ্ঠান নিয়ে পুলিশ ও মুসুল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮১ জনকে।এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানায় পুলিশ চারটি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) দু’টি এবং আহমদিয়া মুসলিম জামায়াত একটি মামলা দায়ের করে।

পুলিশ জানায়, গুজব ছড়ানো, হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা মামলায়, অভিযুক্ত হিসেবে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত রয়েছে ৮ হাজার ২০০ জন।

ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে রাজনগর এলাকার ফজলে রাব্বি(২৮) ও তেঁতুলিয়া উপজেলার সাতমেরা এলাকার রাব্বি ইমনকে(২৬) আটক করা হয়। আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান হত্যার ঘটনায়, পঞ্চগড় পৌরসভার রাজনগড় এলাকার ইসমাইল হোসেন জানু (২৫) ও পৌরসভার তুলারডাঙ্গা এলাকার রাসেল হোসেনকে(২৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ ও র‌্যাবের দায়ের করা মামলায় ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্র ও মামলার বিবরণী অনুযায়ী, র‌্যাব-১৩-এর পক্ষে উপ-পরিদর্শক মাসুদ রানা, সাইদুর রহমান, শামসুজ্জোহা সরকার, আলতাফ হোসেন ও ডিএডি আবদুস সামাদ বাদী হয়ে গত ৪ মার্চ রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় মামলা গুলো করেন।

প্রকৌশলী জাহিদ হাসানের বাবা ওসমান আলী আহমদিয়া মুসলিম জামাতের পক্ষে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারো নাম উল্লেখ না থাকলেও অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, জাহিদ হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও র‌্যাবের সদস্যদের মোতায়েন রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা ঘটনার তদন্ত করছি এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করছি। হামলাকারী যেই হোক না কেন, তাদের রেহাই দেয়া হবে না। অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।”

উল্লেখ্য,গত শুক্রবার পঞ্চগড় জেলা শহরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠান বন্ধের দাবিতে মুসুল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুইজন নিহত এবং পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়। পরে শনিবার একটি মহল জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ায় যে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের(কাদিয়ানি) কয়েকজন সদস্য দুই মুসলমানকে গলা কেটে হত্যা করেছে। গুজবের পর, লাঠি ও ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত কিছু যুবক সড়ক অবরোধ করে, অগ্নিসংযোগ করে এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের দোকান ও বাড়িঘর লুট করে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG