মঙ্গলবার ইরানে স্কুলছাত্রীদের বিষ প্রয়োগের প্রতিবাদে শিক্ষকরা বিক্ষোভ করেছেন। একজন প্রখ্যাত আইনপ্রণেতা ও একটি মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে, ১০০র বেশি স্কুলের ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিষক্রিয়ার উপসর্গে ভোগার কথা জানিয়েছে।
এ সংখ্যাগুলো ইরানের ধর্ম ভিত্তিক শাসকগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতৃত্বকে নাড়া দেওয়া চলমান সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে। সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকেই চলছে দেশব্যাপী বিক্ষোভ, যা শাসকগোষ্ঠীকে ইতোমধ্যে চাপের মুখে রেখেছে।
স্কুলগুলোতে বিষপ্রয়োগের নতুন ঘটনা ও মঙ্গলবারের ঘটনা আবার জনগণের মনে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটাতে পারে, কারণ অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত হয়ে পড়ছেন। এই আক্রমণের পেছনে কারা দায়ী এবং এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে (যদি আদৌ করা হয়ে থাকে), তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বিষপ্রয়োগের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে একটি ইরান ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা। এ সংস্থাটি আমিনির মৃত্যুর পর পরিচালিত বিক্ষোভেরও নিরীক্ষা করেছে। আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন ও মানবাধিকার কর্মীদের ভাষ্যের ওপর নির্ভর করে সংস্থাটি জানায়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অন্তত ২৯০টি বিষপ্রয়োগের ঘটনায় ৭ হাজার ৬০ জন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, অন্তত ৯৯টি শহর ও ইরানের ৩১টি প্রদেশের মধ্যে ২৮টি এই সংকটে আক্রান্ত হয়েছে। তেহরান প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ৩৩টি ঘটনার কথা জানা গেছে। তালিকায় এরপরই আছে কোম প্রদেশ, যেখানে নভেম্বর থেকেই এই সংকট শুরু হয়েছে।
বিষপ্রয়োগের অপর একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে ইরানের প্রখ্যাত আইনপ্রণেতা মোহাম্মেদ হাসান আসেফারির কাছ থেকে, যিনি এসব ঘটনার তদন্তের জন্য গঠিত প্যানেলের সদস্য এবং যার রয়েছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক। তিনি আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ঊর্ধ্বে ২৫ টি প্রদেশের ২৩০ টি স্কুলের ৫ হাজার শিক্ষার্থী অসুস্থতার অভিযোগ এনেছে।
ইরান কর্তৃপক্ষ এখনও আক্রান্তের কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানায়নি। মানবাধিকারকর্মী ও ইরানের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এর আগে জানানো হয়েছিল ১ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অসুস্থতার অভিযোগ এনেছে এবং অন্তত ৪০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
সরকার যথেষ্ট দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, এই অভিযোগে শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের জন্ম নেয়। তারা ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেছেন, যার মধ্যে আছে আহভাজ, ইসফাহান, কারাজ, মাশহাদ, রাশত, সানানদাজ, সাক্কেজ ও সিরাজ। অনলাইন ভিডিও এ বিষয়টি সমর্থন করেছে।
অন্যান্য ভিডিওতে দাঙ্গা পুলিশকে সড়কে নামতে দেখা গেছে। পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ইসফাহানে বিক্ষোভকারীদের ঘিরে রাখে। ইরানের শিক্ষক সিন্ডিকেটের সমন্বয়কারী কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়া কিছু বিক্ষোভকারী জানান পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য মাশহাদ, রাশত ও সাক্কেজে পেপার স্প্রে, জলকামান ও বল প্রয়োগ করেছে।
বিক্ষোভকারী ও অন্যান্যরা দাবি করেছেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীরা স্কুলছাত্রীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে, যাতে তারা আর শিক্ষাগ্রহণ করতে না পারে। এর আগেও ইরানে নারীদের বিরুদ্ধে হামলার নজির রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ইসফাহানের চারপাশে বেশ কয়েক দফা এসিড হামলা হয়। সে সময় ধারণা করা হয়, উগ্রবাদীরা নারীর পোশাক নিয়ে আপত্তি জানাতে এ হামলা চালায়। তবে ইসলামিক বিপ্লবের গোলযোগের মাঝেও স্কুলছাত্রীদের লক্ষ্য করে কোনো ধরনের হামলা আসেনি।