তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর হন্ডুরাস রবিবার চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া হন্ডুরাসকে এ মুহূর্তে মাত্র ১৩টি সার্বভৌম রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়।চীন ও হন্ডুরাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বেইজিং-এ একটি যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করেছে। এই সিদ্ধান্তকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রক ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছে।
চীনের এই কূটনৈতিক বিজয় এমন সময় এলো যখন বেইজিং ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টানাপড়েন চলছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বশাসিত তাইওয়ানের ওপর চীনের আধিপত্য বিস্তারের সুস্পষ্ট প্রকাশ। সাম্প্রতিক এই ঘটনা, লাতিন আমেরিকায় চীনের প্রভাব বাড়ার ইঙ্গিত বহন করে। হন্ডুরাস ও তাইওয়ানের সরকার আলাদা ভাবে ঘোষণা দেয় যে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করছে। এর পরই চীন-হন্ডুরাস নতুন সম্পর্কের বিষয়ে ঘোষণা আসে।
চীন দাবি করে যে তাইওয়ান তাদের ভূখণ্ডের অংশ। প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করে এ অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে তারা। আর, যেসব দেশ এই গণতান্ত্রিক দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখে, তাদের বেশিরভাগের সঙ্গেই চীন কোনো ধরনের যোগাযোগ স্থাপনে অস্বীকৃতি জানায়। শুধুমাত্র তাইওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কারণে চীন বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকিও দিয়ে থাকে।
চীন ও হন্ডুরাসের মধ্যে স্থাপিত নতুন সম্পর্কের প্রভাব নিয়ে সতর্কবাণী দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। হন্ডুরাসের রাজনৈতিক বিশ্লেষক গ্রাকো পেরেজ জানান, বেইজিংয়ের ব্যাখ্যায় (এ সম্পর্কের) যে সুবিধার দিকগুলোকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হবে, সেগুলো হলো বিনিয়োগ ও নতুন চাকুরী সৃষ্টি, “কিন্তু এর সবই হবে মরীচিকার মতো”। পেরেজ উল্লেখ করেন, আরো কয়েকটি দেশ এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করেছে, কিন্তু “ প্রতিশ্রুতি ও প্রাপ্তির মধ্যে ছিলো বিস্তর ফারাক।”
স্বাধীনতাপন্থী প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন ২০১৬ সালের মে মাসে তাইওয়ানের ক্ষমতা দখলের পর তাইপে বেইজিংয়ের কাছে মোট ৯টি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক হারিয়েছে। হন্ডুরাস হলো এগুলোর মধ্যে শেষ দেশ।
তবে, এখনো লাতিন আমেরিকার বেলিজ, প্যারাগুয়ে, গুয়াতেমালা এবং ভ্যাটিকান সিটির সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক বজায় রয়েছে। তাদের বেশিরভাগ অবশিষ্ট অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে ক্যারিবীয় ও দক্ষিণ-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্রগুলো এবং আফ্রিকার দক্ষিণে অবস্থিত এসওয়াতিনি।
চীন, তাইওয়ানকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একঘরে করার চেষ্টা চালালেও, শতাধিক দেশের সঙ্গে বলিষ্ঠ অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে তাইওয়ানের, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও, তারা তাইপেকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে।