হাইতির রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকায় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী বা গ্যাংয়ের সদস্যদের হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (২ মে) একটি থানার কাছে জনতার হামলায় আরও পাঁচজন সন্দেহভাজন গ্যাং সদস্য নিহত হয়। হত্যার পর তাদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বাইরে জালৌসি নামের একটি বস্তি থেকে ওই পাঁচজনকে বের করে এনে হত্যা করা হয়। বেশির ভাগ লাশ হাইতির সাবেক প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইসের বাড়ির দিকে যাওয়ার রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। ২০২১ সালের জুলাই মাসে নিহত জোভেনেল মোইসে খুন হন। পেটিওনভিলের শহরতলির থানার কাছে পঞ্চম মৃতদেহ রেখে দেওয়া হয়েছিল।
থানার সামনের পার্কে বসা প্রত্যক্ষদর্শী জিন মার্ক এটিয়েন বলেন, "পুলিশের চোখের সামনে তাদের হত্যা করা ভয়ঙ্কর। এটা প্রমাণ করে যে কেউ নিরাপদ নয়, যে কাউকে হত্যা করা যেতে পারে”।
এপির সাংবাদিকেরা ওই থানা পরিদর্শন করেছেন। তবে থানা কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। টেলিফোনে মন্তব্য চাওয়া হল, পুলিশ মুখপাত্র তাতে সাড়া দেননি।
গত সপ্তাহ থেকে পোর্ট-অ-প্রিন্স এবং এর আশেপাশের এলাকায় জনতার হামলায় কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিও ও ছবি দেখে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে হচ্ছে। ছবিতে দেখা যায়, জনতা বড় বড় পাথর ছুঁড়ে মারছে এবং তাদের শরীরের চারপাশে ও ওপরে রাখা পেট্রল ভেজা টায়ারে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
২০২২ সালের শেষ তিন মাসের তুলনায় জানুয়ারি থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত ২০ শতাংশ হত্যাকাণ্ড বেড়েছে বলে উল্লেখ করে হাইতির কয়েকজন নাগরিক বলেছেন, তারা গ্যাংগুলোর সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় ক্লান্ত ও ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া, এ বছর এ পর্যন্ত ৬৩৭টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, যা ২০২২ সালের শেষ তিন মাসের তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।
প্রতিপক্ষ গ্যাংগুলোর পাশবিকতার ভয়ে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি হাইতিয়ান তাদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি চলমান হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে জনগণকে “শান্ত” থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমরা যে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছি তা ভয়ঙ্কর”। তিনি এই সহিংসতাকে “নির্বোধ সহিংসতা” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হাইতিতে অবিলম্বে একটি বিদেশি সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছেন। হাইতির প্রধানমন্ত্রী গত অক্টোবরে প্রথম এই অনুরোধ করলেও তখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।