চীন, পাকিস্তান ও আফগান তালিবানের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা শুক্রবার ইসলামাবাদে দুই দিনের বৈঠকে বসছেন। পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, এই অঞ্চলে বেইজিং-এর অগ্রাধিকার সম্পর্কে জানার জন্য এই বৈঠক হচ্ছে ।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিন গ্যাং ও তালিবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আফগান নারী ও অন্যান্যদের প্রতি কঠোর নীতি অবলম্বন করায় তালিবানকে একঘরে করে রেখেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
বেইজিং শুধু তালিবানের সঙ্গে আলোচনার জন্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করেনি, তারা বলেছে “অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গড়তে, একটি মধ্যপন্থী শাসন পরিচালনা করতে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং দৃঢ়ভাবে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াই করতে” তালিবানকে উৎসাহ যোগাবে ও সহযোগিতা করবে।
ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করা ছাড়াও, কিন ও পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি চীন-পাকিস্তান পরমন্ত্রীদের কৌশলগত আলোচনায় যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশকে “সব সময়ের কৌশলগত অংশীদার ও দৃঢ় বন্ধু” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আফগান বিষয়ে চীনের অগ্রাধিকার
ওয়াশিংটন ভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের গবেষক ও লেখক জাফর ইকবাল ইউসুফজাই বলেন, আফগানিস্তান নিয়ে বেজিং-এর অগ্রাধিকার হলো নিরাপত্তা হুমকি হ্রাস করা এবং অর্থনৈতিক সুযোগের অন্বেষণ করা।
গত মাসে, চীন বলেছিলো, এই দেশের জন্য তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা নির্ভর করবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির ওপর।
.গত মাসে প্রকাশিত চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের ১১ দফা সম্বলিত আফগান বিষয়ক অবস্থান-পত্রে বলা হয়, “ উন্নয়নের ভিত্তি ও পূর্বশর্ত হচ্ছে নিরাপত্তা।”
অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে চীন তালিবানকে চাপ দিতে পারবে কিনা। আফগান নীতিপত্রে বেইজিং বলেছে, “আমাদের আশা, নারী, শিশু ও সমস্ত জাতিগোষ্ঠী সহ আফগান জনগণের প্রাথমিক অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করবে আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকার। ”
ইউসুফজাই বলেন, আফগানিস্তানে কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে এখন পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক ঐকমত্য রয়েছে। তিনি বলেন,”চীনের স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের স্বার্থের সঙ্গে একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে।”
বস্তুত, চীন ও রাশিয়া তালিবানকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
চীনের আফগান নীতি প্রকাশের একদিন পর, ১৩ এপ্রিল চীন, রাশিয়া ও আফগানিস্তানের পাঁচটি প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উজবেকিস্তানের সমরখন্দে বৈঠকে মিলিত হন। তারা দাবি করেন যে, তালিবান যেন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করে এবং নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারকে মর্যাদা দেয়।
ইউসুফজাই বলেন, চীন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার চায়, কারণ, আফগানিস্তানে এমন ধরণের সরকার ছাড়া “স্থিতিশীলতা হবে সুদূর পরাহত বিষয়।”
তিনি আরো বলেন,”পশ্চিমের ধারণা অনুযায়ী স্থিতিশীল গণতন্ত্র নয়, বরং তাদের নিজেদের শর্তে তারা আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা চায়।”