চলতি সপ্তাহে পাকিস্তানের পুলিশের কাছে দায়ের করা একাধিক একই ধরনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন স্ব-নির্বাসিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উস্কে দেওয়ার এবং সেনাবাহিনীকে বদনাম করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সমালোচকরা এই পদক্ষেপকে দেশে বাক স্বাধীনতা দমনের আরেকটি প্রচেষ্টা হিসাবে দেখছেন।
যেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন থেকে কাজ করেন। তাদের অধিকাংশই ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তান ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রিল্যান্সার ওয়াজাহাত সাঈদ খান, পাকিস্তানের মূলধারার একটি সংবাদপত্রের সাবেক সম্পাদক শাহীন সেহবাই এবং জাতীয় টিভি চ্যানেলে জনপ্রিয় রাজনৈতিক টক শো উপস্থাপক মঈদ পীরজাদা ও সাবির শাকির।
যারা অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা নিজেদের ‘দেশপ্রেমিক নাগরিক’ হিসেবে পরিচয় দিলেও সমালোচকরা এসব মামলার পেছনে সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
ফ্রান্সভিত্তিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক রক্ষক রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস খান ও সেহবাইয়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে অযৌক্তিক বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং পাকিস্তানি প্রসিকিউটরদের অবিলম্বে ঐ সব অভিযোগ খারিজ করার দাবি জানিয়েছে।
এই নজরদারি সংগঠনটি এই দুই ব্যক্তিকে সমর্থন করে বলেছে যে তারা “কেবলমাত্র সাংবাদিকতা করেছে” এবং অন্য কিছুই করেনি।
গত ৯ মে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর দেশব্যাপী সহিংস বিক্ষোভের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনা ও প্রতীকী (নিদর্শন) ভাঙচুর করে, যার ফলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সেনাবাহিনী বিরোধী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর হাজার হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার করে।
আটককৃতদের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন। প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলা করার অভিযোগে কয়েক ডজন পিটিআই কর্মী সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।
ইউটিউব শো এবং টুইটার পোস্টের মাধ্যমে সাংবাদিকরা নিয়মিতভাবে খানের সমর্থকদের উপর দমনপীড়ন চালানোর জন্য সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করেছেন এবং বন্দীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন।
পিরজাদা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে "ভুয়া এবং ভিত্তিহীন" বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি পাকিস্তান এবং আমেরিকার আদালতে তার আইনজীবীদের মাধ্যমে আনিত অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গীকার করেছেন।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে জাতীয় ভাবে পরিচিত এক সাংবাদিক ইমরান রিয়াজ খানকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার এক মাস পরও তার অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস জানিয়েছে, পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান সেন্সরশিপ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
সিপিজে'র এশিয়া প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর বেহ লিহ ই ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা সাংবাদিকদের জন্য অপরিহার্য কাজ।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নির্লজ্জভাবে সেন্সরশিপ করা প্রত্যাহার করতে হবে এবং গণমাধ্যমকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হয়রানির ভয় ছাড়াই অবাধে প্রতিবেদন করার অনুমতি দিতে হবে।