ভারতের একটি আদালত সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আসা টুইট ও অ্যাকাউন্ট ব্লক করার আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে টুইটারের একটি আইনি আবেদন খারিজ করে দেয়। এই রায়কে বাকস্বাধীনতার প্রতি আঘাত বলে মনে করছেন ডিজিটাল অধিকার কর্মীরা।
কর্ণাটকের হাই কোর্ট গত সপ্তাহে আবেদন খারিজের পাশাপাশি সরকারের আদেশ মানতে বিলম্বের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির বিরুদ্ধে ৬১ হাজার ডলার জরিমানার আদেশ দেয়।
ডিজিটাল অধিকার সংস্থা ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র ও একজন আইনজীবী রাধিকা রায় ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “এই আদেশ অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনো ধরনের নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রয়োগ না করেই অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার একটি বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি করেছে।”
ভারত সরকার কর্ণাটকের হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। যোগাযোগ, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী অশ্বীনি বৈষ্ণব এক টুইট বার্তায় বলেন, “ মাননীয় আদালত আমাদের অবস্থানকে সমুন্নত রেখেছে। দেশের আইন মেনে চলতে হবে।”
টুইটার আদালতকে জানিয়েছে, সরকার তাদেরকে কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণের কথা জানায়নি এবং যাদের টুইট বা অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে, তাদেরকেও তা জানানো হয়নি। কিন্তু আদালত জানিয়েছে, ব্যবহারকারীকে এ বিষয়টি জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
ডিজিটাল অধিকারকর্মীরা বলছেন, এতে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ, কারণ এ ক্ষেত্রে সরকারের কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলার অনুরোধগুলো বৈধ কী না, তা খতিয়ে দেখার কোনো উপায় থাকছে না।
রাধিকা রায় বলেন, “এই মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতার (অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়ার) সঙ্গে ব্লক করার নির্দেশে স্বচ্ছতার অভাব যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কন্টেন্টকেই ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে, যদি তা সরকারের কাছে অপছন্দনীয় মনে হয়।”
রাধিকা রয় উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ভারত অনলাইনে মত প্রকাশের বিরুদ্ধে আরো বড় আকারে বিধিনিষেধ আরোপের দিকে আগাচ্ছে এবং বলেন, “কর্ণাটকের রায় শেষ পর্যন্ত আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কমিয়ে দিচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যথেচ্ছা ব্যবহারকে সীমিত করার ক্ষেত্রে এটি কোনো ভূমিকা রাখছে না।”
টুইটার জানিয়েছে, কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলার অনুরোধের দিক দিয়ে বিশ্বে ভারতের অবস্থান চতুর্থ স্থানে। শীর্ষ ৩ দেশ হল জাপান, রাশিয়া ও তুরস্ক।
ভারতে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টুইটার ব্যবহারকারী রয়েছেন। দেশটি এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবচেয়ে বড় বাজারের অন্যতম।
ইলন মাস্কের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠানটি কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ মেনে চলছে। গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলে ইলন মাস্ক তার সঙ্গে দেখা করেন। মাস্ক বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের “স্থানীয় সরকারী আইন মেনে চলা” ছাড়া কোনো বিকল্প নেই এবং সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে এটি সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।