ভারতে হরিয়াণায় নুহ-র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অন্যতম মদতদাতা বিট্টু বজরঙ্গিকে বুধবার ১৬ অগাস্ট গ্রেফতার করেছে সে রাজ্যের পুলিশ। মঙ্গলবার ১৫ অগাস্ট তাকে ফরিদাবাদের বাড়ি থেকে প্রথমে আটক করা হয়। বুধবার সরকারিভাবে গ্রেফতারির কথা জানিয়েছে পুলিশ।
নাম বজরঙ্গি হলেও ধৃতের সঙ্গে তাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে বজরং দল নামক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন দাবি করেছে। যদিও পুলিশের কাছে অতীতে দায়ের হওয়া মামলায় বিট্টুকে বজরং দলের কর্মকর্তা বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। বজরং দলের কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যেত। তবে সে মূলত একজন গো-রক্ষক হিসাবে পরিচিত। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের মাথা বিট্টু বজরঙ্গী ।
হরিয়াণা পুলিশ জানিয়েছে ৩১ জুলাই নুহ-তে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং তাতে ছয় জন নিহত হওয়ার ঘটনার পিছনে বিট্টু বজরঙ্গির যোগ আছে। ৩১ জুলাই প্রথমে নুহতে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গুরুগ্রাম-সহ আশপাশের বহু এলাকায়। উত্তেজনা ছড়ায় লোগায়া রাজস্থানের কিছু এলাকাতেও। নিহতদের মধ্যে পুলিশের দু’জন হোমগার্ড আছেন।
পুলিশের বক্তব্য, বিট্টু বজরঙ্গি অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। তবে কেন পনরো দিন সময় লাগল তাকে গ্রেফতার করতে তার সদুত্তর দিতে পারেনি পুলিশ। দাঙ্গার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছিল ‘প্রভাবশালী’ বিট্টু বজরঙ্গিকে পুলিশ ছুঁতে পারবে না। তার সঙ্গে ক্ষমতাবান লোকজনের ওঠাবসা। অতীতে একাধিক ঘটনায় এই ব্যক্তিকে পুলিশ গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও গ্রেফতার করেনি।
নুহ-র ঘটনায় আর এক অন্যতম অভিযুক্ত মনু মানেসরকে পুলিশ এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে দু’জন মুসলিম ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ আছে। সেই মামলাটি হয়েছে রাজস্থানে। মনু মানেসরও গো-রক্ষক হিসাবে হরিয়ানা এবং লাগায়ো রাজস্থানে পরিচিত।
গত ৩১ জুলাই নুহ-তে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রা বের হয়। সেই শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক’দিন ধরেই নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছিল। মনু মানেসরও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করে সে ৩১-এর শোভাযাত্রায় থাকবে। যদিও সে পলাতক বলে খাতায় কলমে হরিয়ানা পুলিশ দাবি করেছে। রাজস্থান পুলিশ বারে বারে মানেসরকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, বিট্টুর বিরুদ্ধে গোটা দশেক মামলা আগে থেকেই আছে। ৩১ তারিখ শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়লে বিট্টু প্রকাশ্যে উস্কানি দেয় বলে পুলিশের অভিযোগ। এক পুলিশ কর্তাই এই ঘটনায় বিট্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বিট্ট বজরঙ্গির আসল নাম রাজকুমার। পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা। তবে মুসলিম অধ্যুষিত নুহ-তে সে হিন্দুদের পরিত্রাতা হিসাবেই পরিচিত। সাম্প্রদায়িক হিংসার একাধিক ঘটনায় তার নাম জড়িয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের শোভাযাত্রায় বিট্টু এবং মনু মানেসর থাকবে জানাজানি হতেই স্থানীয় মুসলিমদের একাংশ তাদের মহল্লা দিয়ে শোভাযাত্রা নিয়ে যেতে আপত্তি তোলেন। তা থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।