অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের মহারাষ্ট্রের মুখ্য বিরোধী দল এনসিপি-র সুপ্রিমো দলসহ যোগ দিতে পারেন বিজেপিতে, জোর জল্পনা


নয়াদিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সভার আগে একটি রোডশো চলাকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের জন্য অপেক্ষমাণ বিজেপি সমর্থকরা মোদীর ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করছে। ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩। (ফাইল ছবি)
নয়াদিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সভার আগে একটি রোডশো চলাকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের জন্য অপেক্ষমাণ বিজেপি সমর্থকরা মোদীর ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করছে। ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩। (ফাইল ছবি)

ভারতের মহারাষ্ট্রের পুণেতে এনসিপি সুপ্রিমো কাকা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে ভাইপো অজিত পাওয়ারের গোপন বৈঠক নিয়ে গত রবিবার ১৩ অগাস্ট থেকে উত্তেজনার পারদ চড়ছে মহারাষ্ট্রের রাজ্য রাজনীতিতে। পুণেতে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে সপ্তাহখানেক আগে গোপনে বৈঠক করেন শরদ-অজিত।

গত রবিবার সেই বৈঠকের খবর ফাঁস হওয়ার পর থেকে অজিত পাওয়ার তা নিয়ে মুখ খোলেননি। অন্যদিকে, শরদ পাওয়ার সাফাই দিয়েছেন যে "এটা নিছকই পারিবারিক বৈঠক ছিল। অজিত আমার ভাইপো। সে আমার সঙ্গে দেখা করতেই পারে।" জল্পনা থামাতে আরও বলেন, "আমি মহা বিকাশ আগারিতে আছি, ছিলাম, থাকব। অজিত নিতান্তই একটি পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছিল।"

দলীয় সূত্রে খবর, শরদের কথা বিরোধী জোট মহা বিকাশ আগারির অপর দুই শরিক কংগ্রেস ও শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র নেতারা কেউ বিশ্বাস করেননি। বরং বৈঠকের উদ্দেশ্য নিয়ে বারে বারেই প্রশ্ন তুলেছে শিবসেনা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নানা পাটোলেও বৈঠক নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে কড়া প্রতিক্রিয়া দেননি। কংগ্রেস হাইকমান্ড তাকে বলেছে পাওয়াদের বিষয়টি সরাসরি শীর্ষ নেতৃত্ব দেখবে। প্রয়োজনে রাহুল গান্ধী তার সঙ্গে কথা বলবেন।

মঙ্গলবার ১৫ অগাস্ট রাত থেকে সেই বৈঠক নিয়ে নতুন করে জল গড়িয়েছে। জানা গিয়েছে, পুণের ব্যবসায়ীর বাড়ির বৈঠকে শরদের সঙ্গে এনসিপি-র মহারাষ্ট্রের সভাপতি নানা পাটোলেও হাজির ছিলেন। ফলে শরদ-অজিত বৈঠক যে মোটেই পারিবারিক ছিল না তা নিয়ে আর সন্দেহ নেই।

জানা যাচ্ছে, সেখানে শরদকে ভাইপো অজিত প্রস্তাব দেন, গোটা এনসিপি বিজেপির হাত ধরলে ২০২৪-এ নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় তাকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদ দেওয়া হবে। সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, অজিতের সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের সময় অমিত শাহ তাকে এই প্রস্তাব কাকার কাছে পেশ করার পরামর্শ দেন। দিল্লিতে অজিত-অমিতের সেই বৈঠকে তৃতীয় কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, মোদী সরকার এর আগে শরদ পাওয়াকে পদ্মবিভূষণ সম্মান দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই এই মারাঠা নেতাকে তার পরম বন্ধু বলে থাকেন। সেই সঙ্গে শরদ সম্পর্কে বলেন, "ওর প্রধানমন্ত্রী হতে না পারা দেশের জন্য মস্ত বড় ক্ষতি। স্রেফ গান্ধী পরিবারের বাধায় তিনি দেশের সর্বোচ্চ পদে বসতে পারেননি।"

মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলের খবর, অজিতের প্রস্তাব নিয়ে শরদ সরাসরি কথা দেননি। আবার খারিজও করেননি। তিনি সময় চেয়েছেন। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব অপেক্ষায় নারাজ। ৩১ অগাস্ট-১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বসতে চলেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র পরবর্তী বৈঠক। সেখানে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা হবে। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি-শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র বোঝাপড়া শেষ পর্যায়ে। বিজেপি নেতত্ব চাইছে ইন্ডিয়া জোটের মুম্বই বৈঠকের আগেই পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিন।

শরদকে বোঝানো হয়েছে, বিজেপির সঙ্গে থাকলে সরকারে থাকার সুবাদে তার দল মহারাষ্ট্রে প্রভাব বাড়াতে পারবে। বস্তুত এই যুক্তি দিয়েই শিবসেনা ভেঙে বিজেপির সমর্থনে সরকার গড়েছেন একনাথ শিন্ডে। অজিত পাওয়ার সেই সরকারে যোগদানের কারণ হিসাবেও উন্নয়নের কথাই বলেন।

এদিকে, রাজনৈতিক মহলের মতে, পাওয়ার-সহ গোটা এনসিপি জোটকে শাসক শিবিরে যুক্ত করার ভাবনা জানাজানি হতে সব দলেই কম-বেশি চিন্তায় পড়েছে। সবচেয়ে বিরক্ত শাসক জোটের একনাথ শিন্ডের শিবির। তারা মনে করছে শরদের মতো ওজনদার নেতা শাসক জোটে এলে তাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে যাবে। আরও বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবেন অজিত।

চিন্তায় মহারাষ্ট্র বিজেপিও। বিজেপি শিবিরের নেতারাও মনে করছেন শরদের নেতৃত্বে এনসিপি শাসক জোটে এলে রাজ্য-রাজনীতিতে তারা ব্রাত্য হয়ে যেতে পারেন। পাওয়ারের নেতৃত্বে এনসিপির ধার-ভার বেড়ে যাবে। বস্তুত, উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে চালু কথাই ছিল তিনি পাওয়ারের কথায় ওঠাবসা করেন।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের অঙ্ক ভিন্ন। মহারাষ্ট্র বিজেপিতে ‘মারাঠা’ সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় মুখ একটিও নেই। অন্যদিকে, পাওয়ার ওবিসি ভুক্ত এই সম্প্রদায়ের সবচেয়ে শক্তিশালী মুখ। ফলে তাকে জোটে টেনে আনা গেলে মারাঠা ভোটের সিংহভাগ শাসক জোটের ঝুলিতে টেনে আনা যাবে। সূত্রের খবর, পাওয়ারের সম্ভাব্য ডিগবাজির কথা মাথায় রেখেই শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) এবং কংগ্রেস আসন বোঝাপড়া নিয়ে প্ল্যান বি তৈরি রেখেছে। এনসিপি মহা বিকাশ আগারি ছেড়ে যেতে পারে, ধরে নিয়েই পা ফেলছেন বাকি দুই শরিক দলের নেতারা।

XS
SM
MD
LG