ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজা ভূখণ্ড ও মিশর সীমান্ত এলাকা ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত যাতে এই অঞ্চলটির নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করা যায়।
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ ১৩তম সপ্তাহে পড়লো। নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধ আরও অনেক মাস ধরে চলবে।
ইসরাইল যদি সীমান্ত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তাহলে এটা কার্যত গাজা থেকে ২০০৫ সালে তাদের প্রত্যাহারের বিপরীত ঘটনা হবে এবং কয়েক বছর হামাসের নিয়ন্ত্রণের পর এই ছিটমহল আবার ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
নেতানিয়াহু বলেন, “ফিলাদেলফি করিডর বা আরও যথাযথভাবে বললে (গাজার) দক্ষিণাঞ্চলের স্টপেজ বিন্দু আমাদের হাতে থাকা দরকার। একে বন্ধ করতে হবে। এটা স্পষ্ট যে, অন্য কোনও সমঝোতা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নিরস্ত্রীকরণকে সুনিশ্চিত করবে না।”
তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে প্রায় ৮ হাজার জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে। হামাস-পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার বলেছে, অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২১,৬৭২ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
নেতানিয়াহু শনিবার বলেছেন, “ধাপে ধাপে আমরা হামাসকে অকেজো করে দিচ্ছি। এই গোষ্ঠীর নেতাদেরও আমরা নিশ্চিহ্ন করে দেবো।”
তিনি সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের আরও ভিতরে প্রবেশ করেছে ইসরাইলি ট্যাঙ্ক। আল বুরেইজ, নুসেইরাত, মাগাজি শরণার্থী শিবির ও দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে কামান দাগা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় গাজায় তীব্র ইসরাইলি বিমান হামলায় ১৬৫ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হয়েছে।
গাজায় ত্রাণবাহী গাড়ির বহরকে সম্প্রতি ইসরাইলি বাহিনী নিশানা করেছে জানিয়ে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা প্রতিবাদ করেছেন।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ের আন্ডার-সেক্রেটারি ও আপদকালীন ত্রাণ সমন্বয়ক মার্টিন গ্রিফিথ শুক্রবার বলেন, “গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে রাফাহ যাওয়ার পথে” একটি মানবিক ত্রাণবাহী কনভয়ের উপর “গুলি চালানো হয়”, যদিও সেই গাড়িগুলি “স্পষ্টভাবে চিহ্নিত” ছিল।
গ্রিফিথ বলেন, “এই সংঘাত অবশ্যই বন্ধ হওয়া দরকার।” এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, মানবিক কর্মীদের উপর হামলা বেআইনি।
ইউনিসেফ গাজাতে শুক্রবার কমপক্ষে ৬ লক্ষ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। গাজা ভূখণ্ডের প্রায় ১৭ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু তাদের নিয়মিত টীকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ইউনিসেফ বলেছে, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র সঙ্গে কাজ করছে টীকা না পাওয়া শিশুদের কাছে পৌঁছতে।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের ব্যাপক হামলা হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে রাফাহতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। সেখানে জনসংখ্যা তিনগুণের চেয়ে বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮ লক্ষতে।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।