অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অপরাহ উইনফ্রে


ফাইল ছবি - অপরাহ উইনফ্রে তার টিভি শোতে কথা বলছেন। ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। নিউ ইয়র্ক।
ফাইল ছবি - অপরাহ উইনফ্রে তার টিভি শোতে কথা বলছেন। ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। নিউ ইয়র্ক।

যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসকে 'ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থ' হিসাবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ইতিহাসে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক বা ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে , সেগুলো তুলে ধরা হয়। এর অংশ হিসাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এই দেশের বিখ্যাত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের অবদানের কথা তুলে ধরছে।

অপরাহ উইনফ্রে

স্থানীয় গ্রসারি স্টোর থেকে যার কাজের সূচনা, সেই অপরাহ উইনফ্রে আজ বিশাল এক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। এক সময়ে ন্যাশভিলের একটি টেলিভিশন কেন্দ্রের তিনি সর্বকনিষ্ঠ একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ উপস্থাপিকা হিসেবে খ্যতি অর্জন করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে একাধিক টিভি কেন্দ্রে উপস্থাপিকা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

প্রথম দিকে তাঁর অনুষ্ঠানকে হাল্কা টেবলয়েড অনুষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করা হতো কিন্তু পরের দিকে তিনি সিরিয়াস কিছু বিষয় যেমন আধ্যাতিকতা, ভূ-রাজনীতি এবং হৃদরোগ নিয়েও বিস্তর অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন। টক শো ছাড়াও একাধিক মিনি-সিরিজ নাটক প্রযোজনা করেন, অভিনয়ও করেন। তাঁর বিখ্যাত দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো’র শেষ সিরিজটি প্রচারিত হয় ২০১১ সালের ২৫ মে।

অপরাহ উইনফ্রের জন্ম ২৯ জানুয়ারি ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য মিসিসিপির একটি গ্রামে। তাঁর মা একজন গৃহকর্মী হিসেব কাজ করতেন, বাবা ছিলেন প্রথমে খনিজ-কর্মী, পরে তিনি নাপিত ছিলেন । আরও পরে তিনি সিটি কাউন্সিলম্যান হন।

অবিবাহিত মা-বাবার সন্তান অপরাহ উইনেফ্রেকে এক পর্যায়ে তাঁর মা তার নানির কাছে রেখে যান। অপরাহ তাঁর জীবনের প্রথম ছয় বছর তাঁর নানির কাছে ছিলেন । সেই সময়ে অপরাহ’র নানি এত বেশি দরিদ্র ছিলেন যে অপরাহ’র জন্য তিনি শুধু মাত্র আলুর বস্তা দিয়ে পোশাক তৈরি করে দিয়েছিলেন আর তিনি যে কেবল দারিদ্রের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন তাই নয়; কৈশোরেই তিনি যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন। সন্তানটি জন্মের পরই মারা যায়।

অপরাহ উইনফ্রে একটি অনুষ্ঠানে কথা বলছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০। নিউ ইয়র্ক।
অপরাহ উইনফ্রে একটি অনুষ্ঠানে কথা বলছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০। নিউ ইয়র্ক।

তিনি ১৯৮৬ সালে তাঁর টেলিভিশন অনুষ্ঠানের একটি পর্বে যৌন নিপীড়ন বিষয়ক বক্তব্যে তিনি জানান, ন’বছর বয়স থেকেই তাঁর নিকট আত্মীয়রা ও পরিবারের এক বন্ধু তাঁর উপর যৌন নিপীড়ন চালায়।

স্কুলে পড়ার সময়ে তিনি অভাবগ্রস্ত কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে মায়ের টাকা চুরি করে এদের সাহায্য করতেন । পরে তাঁর মা বিরক্ত হয়ে, তাঁকে তাঁর বাবা ভার্নন উইনফ্রের কাছে ন্যাশভিলে পাঠিয়ে দেন। সেই সময় থেকে তাঁর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

অপরাহ ১৯৮৬ সালে নিজেই জানান, “আমার বাবা যখন আমার দায়িত্ব নেন তখন থেকে আমার জীবনধারা্য় পরিবর্তন আসে। তিনি আমাকে বাঁচিয়ে তোলেন । তিনি জানতেন, তিনি কি চান; তাঁর প্রত্যাশাই বা কী। এ ব্যাপারে তিনি আপোষ করতে রাজি ছিলেন না”।

অপরাহ উইনফ্রে তাঁর নান্দনিক কাজের পাশাপাশি সম্পত্তির ব্যবসা থেকে শুরু করে রাজনীতি পর্যন্ত সর্বত্র বিচরণ করেছেন। প্রতিকুল অবস্থা থেকে বেরিয়ে যে সাফল্যের দিকে গেছেন অপরাহ উইনফ্রে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন নেলসন ম্যান্ডেলা । তিনি ২০১৩ সালে এক কোটি কুড়ি লক্ষ ডলার দান করেন ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আফ্রিকান আমেরিকান হিস্ট্রি এন্ড কালচারকে। ওই একই বছর বারাক ওবামা তাঁকে প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম প্রদান করে সম্মানিত করেন।

XS
SM
MD
LG