যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসকে 'ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থ' হিসাবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ইতিহাসে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক বা ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে , সেগুলো তুলে ধরা হয়। এর অংশ হিসাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এই দেশের বিখ্যাত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের অবদানের কথা তুলে ধরছে।
ডেনযেল ওয়াশিংটন
আমেরিকান অভিনেতা ডেনযেল ওয়াশিংটন হলিউডে প্রচলিত একটি ধারনাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। এক সময় ভাবা হত, কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতারা কখনো শ্বেতাঙ্গ দর্শকের মন জয় করতে পারবে না। কিন্তু ডেনযেল ওয়াশিংটন সকল ধর্ম-বর্ণের গণ্ডি ছাপিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের সকল সিনেমা-প্রিয় মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
সিনেমা জগতে ওয়াশিংটনের যাত্রা শুরু ১৯৮১ সালে যখন তিনি ‘কার্বন কপি’ নামক ফিল্মে অভিনয় করেন। পরের কয়েক বছর ‘সেন্ট এলসওয়ের’ নামক টেলিভিশন সিরিজে অভিনয় করে জাতীয় পর্যায়ে মনোযোগ আকর্ষণ করেন। আশির দশকের শেষে তাঁর অভিনয় জীবনে মোড় ঘুরানো ঘটনা ঘটে।
প্রথমে, ‘ক্রাই ফ্রিডম’ সিনেমায় দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ-বিরোধী নেতা স্টিফেন বিকোর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ওয়াশিংটন ‘সেরা সহকারি অভিনেতা’ শাখায় অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার-এর জন্য মনোনিত হন। তার দু’বছর পর তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধ নিয়ে তৈরি সিনেমা ‘গ্লোরি’ তে একজন মুক্তি পাওয়া ক্রিতদাসের ভুমিকায় অভিনয়ের জন্য ‘সেরা সহকারি অভিনেতা’ শাখায় অস্কার জয় করেন।
ডেনযেল ওয়াশিংটনের জন্ম নিউ ইয়র্ক রাজ্যে, ১৯৫৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তাঁর মা ছিলেন একটি বিউটি পার্লারের মালিক আর বাবা একাধিক চাকরি করতেন। বাবা-মার বিচ্ছেদের পর ডেনযেল ওয়াশিংটনকে তাঁর মা একটি প্রাইভেট স্কুল, ওকল্যান্ড মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে পাঠিয়ে দেন। স্কুল শেষে তিনি ফোরডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটক ও সাংবাদিকতায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় আমেরিকান কন্সারভেটরি থিয়েটারে যোগ দিয়ে ডেনযেল ওয়াশিংটন অভিনয় জগতে তাঁর যাত্রা শুরু করেন।
ওয়াশিংটনের ক্যারিয়ারে দুটি সিনেমা বিশেষ স্থান করে নিয়েছে, কারণ এখানে তিনি আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠীর ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান মুসলিম নেতা ম্যালকম এক্স এর নামে, তাঁর জীবন নিয়ে ১৯৯২ সালে তৈরি সিনেমায় মুল চরিত্রের ভুমিকায় অভিনয় করে ওয়াশিংটন ‘সেরা অভিনেতা’ শাখায় অস্কারের জন্য মনোনয়ন পান।
সাত বছর পর ১৯৯৯ সালে তিনি পুনরায় সেরা অভিনেতা’ শাখায় অস্কারের জন্য মনোনীত হন। কৃষ্ণাঙ্গ মিডলওয়েট বক্সার রুবিন কার্টারের গ্রেফতার এবং ভুল বিচারের কারণে ২০ বছর কারাবাসের কাহিনী নিয়ে তৈরি সিনেমা ‘দ্য হারিকেন’-এ ওয়াশিংটন মুল চরিত্রে অভিনয় করেন।
দ্য হারিকেন-এর সাফল্যের দু’বছর পরেই ডেনযেল ওয়াশিংটন ‘ট্রেইনিং ডে’ সিনেমায় একজন অসৎ ও হিংস্র পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা শাখায় অস্কার লাভ করেন। তিনি ছিলেন হলিউডের ইতিহাসে দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ যিনি সেরা অভিনেতা শাখায় অস্কার পেলেন।
ডেনযেল ওয়াশিংটন সিনেমা আর থিয়েটারে তাঁর কাজ আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছেন। একদিকে তিনি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের সাহিত্যকর্ম ম্যাকবেথ নিয়ে পরিচালক জোয়েল কুনের চিত্রায়ন ‘দ্য ট্রাজেডি অফ ম্যাকবেথ’-এ নাম চরিত্রে অভিনয় করে ২০২১ সালে পুনরায় সেরা অভিনেতা’ শাখায় অস্কারের জন্য মনোনীত হন। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন অ্যাকশন সিনেমা ‘দ্য ইকুয়ালাইজার’ – এর তৃতীয় পর্ব নিয়ে ২০২৩ সালে সিনেমার পর্দায় ফিরে আসেন।