যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসকে 'ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থ' হিসাবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ইতিহাসে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক বা ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে , সেগুলো তুলে ধরা হয়। এর অংশ হিসাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এই দেশের বিখ্যাত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের অবদানের কথা তুলে ধরছে।
সেরেনা উইলিয়ামস
বিশ্ব টেনিস ইতিহাসে ১৯৯৯ সালের ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল একটি স্মরণীয় টুর্নামেন্ট। সেপ্টেম্বর মাসে নারী একক ফাইনালে সেরেনা উইলিয়ামস যখন প্রতাপশালী সুইস প্লেয়ার মারটিনা হিঙ্গিসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন, সেটা ছিল তাঁর বিশ্বজয় অভিযানের শুরু।
“সেরেনা উইলিয়ামস টেনিস বিশ্বে বিপ্লব ঘটিয়েছেন,” ন্যাশনাল উইমেন্স হিস্টরি মিউসিয়াম ওয়েবসাইটে লিখেছেন মারিয়ানা ব্র্যান্ডম্যান। “তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী টেনিস প্লেয়ার গণ্য করা হয়, সম্ভবত সর্বশ্রেষ্ঠ অ্যাথলিট।” টেনিস বিশেষজ্ঞদের মতে, সেরেনা উইলিয়ামসের খেলার বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর প্রচণ্ড গতিময় সার্ভ আর শক্তিশালি গ্রাউন্ড শট।
সেরেনা উইলিয়ামস ১৯৮১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মিশিগান রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাবা রিচার্ড উইলিয়ামস আর মা ওরাসিন প্রাইসের পাঁচ কন্যার সর্ব কনিষ্ঠ ছিলেন। মারিয়ানা ব্র্যান্ডম্যান বলছেন, বাবা-মা শুরু থেকেই বদ্ধ পরিকর ছিলেন সেরেনা এবং বোন ভিনাসকে টেনিস প্লেয়ার করে গড়ে তুলতে। প্রথমে তাঁরা বই পড়ে, ভিডিও দেখে নিজেদের টেনিস শিখিয়েছেন, তারপর পরিবার নিয়ে ক্যালিফোরনিয়ার কম্পটনে চলে যান। সেখান থেকেই খুব অল্প বয়সে সেরেনা আর ভিনাসের টেনিস প্রশিক্ষন শুরু হয়।
রিচার্ড উইলিয়ামস পুনরায় পরিবারকে সরিয়ে নেন – এবার যান ফ্লোরিডা রাজ্যের পাম বিচ এলাকায়। তিনি সতর্কতার সাথে দুই বোনের অগ্রগতি ম্যানেজ করেন। সেরেনা ১৯৯৫ সালে পেশাদার হিসেবে প্রথম ম্যাচ খেলেন। তখন তার বয়স চৌদ্দ বছর। তার তিন বছর পরে সেরেনা বিশ্বে সেরা ২০জনের মধ্যে উঠে আসেন।
“আফ্রিকান-আমেরিকান উইলিয়ামস এবং তাঁর বোন তাৎক্ষনিক ভাবে টেনিস বিশ্বে প্রভাব ফেলেন, যেখানে প্রধানত শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য ছিল,” বলছেন মারিয়ানা ব্র্যান্ডম্যান। “টেনিস কোর্টে তাদের শক্তি এবং অ্যাথলেটিক নৈপুণ্য অনেক প্রতিপক্ষের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে ছিল, আর তাদের বৈচিত্র্যময় পোশাক-আশাকের স্টাইল মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।”
বিশ্ব টেনিসে সে চারটি চ্যাম্পিয়নশিপকে সবচেয়ে গুরুপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়,তার মধ্যে ইউএস ওপেন অন্যতম। অন্য তিনটি হচ্ছে, ফ্রেঞ্চ ওপেন, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর উইম্বল্ডন। এই চারটিকে ‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ টুর্নামেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। সেরেনা উইলিয়ামস ছিলেন দ্বিতীয় আফ্রিকান-আমেরিকান যিনি এই চারটি টুর্নামেন্টের একটি জয় করলেন। কিন্তু সেটা ছিল ইতিহাসের সুত্রপাত মাত্র।
পরবর্তী ১৮ বছরে সেরেনা উইলিয়ামস ২৩ বার এই চারটি টুর্নামেন্ট-এ একক শিরোপা জয় করেছেন। যার মধ্যে আছে ৭টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ৩টি ফ্রেঞ্চ ওপেন, ৭টি উইম্বেল্ডন আর ৬টি ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ। একই সময় তিনি তাঁর বোন ভিনাস উইলিয়ামসকে নিয়ে ১৪টি ‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ টুর্নামেন্টে ডাবলস শিরোপা জিতেছেন, এবং তিন বার অলিম্পিক গেমেস ডাবলস-এ স্বর্ণ পদক পেয়েছেন।
তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে দু’বার – ২০০৩ এবং ২০১৫ সালে – একই সময় চারটি ‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’-এর শিরোপাধারী ছিলেন। এই কৃতিত্বকে গণমাধ্যমে ‘সেরেনা স্ল্যাম’ বলে অভিহিত করা হয়। তবে তাঁর আগে নারী বিভাগে মারগারেট কোর্ট (১৯৭০) এবং স্টেফি গ্রাফ (১৯৮৮) একই বছরে চারটি ‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ জয় করেছিলেন।