গাজায় ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে সম্ভবত কয়েক সপ্তাহব্যাপী বিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য রবিবার ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের একটি প্রতিনিধি দল মিশরের রাজধানী কায়রোতে অবস্থান করছে। তবে ইসরাইলি আলোচনাকারীরা উপস্থিত হয়েছে কি না, তা পরিষ্কার না।
যুক্তরাষ্ট্র, যারা যুদ্ধে ৬-সপ্তাহ বিরতির জন্য চাপ দিচ্ছে, বলছে একটি সমঝোতা ‘তৈরি হয়ে আছে’, অর্থাৎ তাতে ইসরাইলের সম্মতি পাওয়া গেছে। এখন হামাসের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছে। তারপরও, মিশরীয় এবং কাতারি কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় চালানো আলোচনার অবস্থা এখনো অনিশ্চিত।
কোন চুক্তি হলে তা হবে গত নভেম্বরের সপ্তাহব্যাপী অস্ত্র-বিরতির পর প্রথম যুদ্ধ বিরতি। প্রস্তাবিত চুক্তির অধীনে, হামাসের হাতে জিম্মি ১০০’র বেশি বন্দিদের মধ্যে কয়েক ডজনকে ছেড়ে দেয়া হবে। বিনিময়ে ইসরাইলের হাতে বন্দি কয়েক’শ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, “এই মুহূর্তে, যুদ্ধবিরতির রাস্তা বেশ সোজা-সাপটা। টেবিলে একটি চুক্তি রাখা আছে। কাঠামোগত চুক্তি তৈরি।”
কিন্তু হামাস প্রতিনিধি দল কায়রোতে আসার পরও একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, চুক্তি ‘’এখনো ঠিক হয় নাই।” ইসরাইল যে কোন প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে, তারও কোন আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা দেয়া হয় নি।
জানা যাচ্ছে, ইসরাইল হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন, তাদের পুরো তালিকা চাইছে। একটি ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, হামাস এই দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাস দাবী করছে যুদ্ধ যেন স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়, যেটা এই চুক্তিতে নেই।
ইসরাইল বলছে, তারা হামাসের কাছ থেকে হুমকির অবসান ঘটাতে বদ্ধপরিকর, যাতে তারা আবার ৭ অক্টোবরের মত সন্ত্রাসী আক্রমণ না চালাতে পারে।গত বছর ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ লোক নিহত হয়েছিল। ইসরাইলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৩০,০০০ লোক মারা গেছে, যাদের ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু।
হামাসের জবাবের অপেক্ষায়
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি বিষয়ে রবিবারে কায়রোতে আবার আলোচনা শুরুর কথা ছিল। মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা সর্বশেষ প্রস্তাবিত কাঠামোর বিপরীতে হামাসের কাছ থেকে জবাব পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শনিবার জানান, ইসরাইল কম-বেশি এই কাঠামো মেনে নিয়েছে।
এ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনার অনুমোদন না থাকায় নাম না প্রকাশের শর্তে এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, “এ মুহূর্তে হামাসের কোর্টে বল। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে যত বেশি চাপ দেওয়া সম্ভব, তা অব্যাহত রেখেছি।”
যদি এই প্রস্তাবিত চুক্তি গৃহীত হয়, তাহলে ভঙ্গুর বিবেচিত জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধ-বিরতি শুরু হবে। সঙ্গে গাজায় আরও বেশি পরিমাণে মানবিক ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
মিশরীয় সূত্র ও হামাস কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হামাস এখনো তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। তাদের দাবি, সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হতে হবে।
মধ্যস্থতাকারীরা রমজান মাসের আগে যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছেন। মার্চের ১০ বা ১১ তারিখ থেকে মুসলিমদের রোজা রেখে ইবাদত করার এই পবিত্র মাস শুরু হতে যাচ্ছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা প্রায় পাঁচ মাসের সংঘাতে জর্জরিত হামাস-শাসিত গাজার দুর্দশা অবসানের আশা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন আশা প্রকাশ করেছেন, রমজানের আগেই যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত হবে। তবে তিনি শুক্রবার সংবাদদাতাদের বলেন, “আমরা এখনো সেখানে (মতৈক্যে) পৌঁছাতে পারিনি।”
বাইডেন ও অন্যান্য বিশ্ব নেতারা ফিলিস্তিনিদের জরুরি মানবিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য চাপে আছেন। পাঁচ মাসের যুদ্ধে ত্রাণ সরবরাহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে এবং অনুমান করা হয়, গাজার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি, এএফপি ও রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে।