অপারেশন ডেভিল হান্টের দ্বিতীয় দিন সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সিরাজগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম ও গাজীপুর মহানগর যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারা সরকার আনুসহ গাজীপুরে ১০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
প্রথম দিনে গাজীপুর জেলা ও মহানগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা আওয়ামী লীগ ও দলটির বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাধারণ মানুষ চাচ্ছেন 'সন্ত্রাসী ও অপরাধী'রা যে দলেরই হোক, তাদের গ্রেফতার অব্যাহত থাকুক।
গাজীপুরের দক্ষিণখান এলাকায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়ে ১৮ জনকে আহত করা হয়।
পরদিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এরপরই রাত থেকে শুরু হয় অপারেশন ডেভিল হান্ট। দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান চলে গতকাল রাতে। সাধারণ মানুষ এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে দলমত বিবেচনার ঊর্ধে ওঠে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলছেন।
গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানা থেকে দ্বিতীয় দিনে রবিবার দিবাগত রাত পর্যন্ত ২১ জন এবং মহানগর এলাকা থেকে ৭৯ জন গ্রেফতার হয়।
জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক বলেন, "এদের মধ্যে জেলার শ্রীপুর থানা এলাকায় আত্মগোপনে থাকা সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামও গ্রেপ্তার হন। সিরাজগঞ্জের তার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় এবং গাজীপুরে কোনো মামলা না থাকায় সেখানেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।"
গ্রেফতার হওয়ার সময় ওই বাসায় থাকা তার স্ত্রীকেও থানায় আনা হয়েছিল। তাকেও সিরাজগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে এ ধরনের আত্মগোপনকারী লোকজনসহ জেলার অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অপারেশন ডেভিল হান্ট কী?
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে গাজীপুরসহ সারাদেশে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট'।
'সন্ত্রাসীদের' আইনের আওতায় আনতে এই অভিযান হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার রাতে গাজীপুরে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও 'সন্ত্রাসীদের' আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সভাসূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও 'সন্ত্রাসীদের' আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করা হবে।
কী ঘটেছিল মোজাম্মেল হকের বাড়িতে?
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সকল প্রকার চিহ্ন মুছে দিতে বিভিন্ন স্থাপনা ও নেতা কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর সময়ে হামলার শিকার হয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। পরে তাদের চিকিৎকার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর শহরের দক্ষিণখান এলাকায় ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুর চালাতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুদ্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করে।
হামলার ঘটনা নিশ্চিত করে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, হামলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওসি আরও জানান, ওই ঘটনা সংশ্লিষ্ট আরও তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে পুলিশ। গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শহরের রাজবাড়ী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এতে যোগ দিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।
এদিকে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মারধরে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের খোঁজখবর নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, "ছাত্রদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।"