অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কংগ্রেসে ট্রাম্পের ভাষণ: 'আমেরিকার স্বর্ণ যুগ সবে শুরু হয়েছে'


যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের যৌথ সভায় ভাষণ দেয়ার এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৫।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের যৌথ সভায় ভাষণ দেয়ার এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৫।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে কংগ্রেসের যৌথ সভায় ভাষণ দেন, যেখানে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ প্রথম কয়েক সপ্তাহের কাজের কথা তুলে ধরেন।

“আমেরিকা ইজ ব্যাক!” তিনি বলেন। “আমেরিকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে!”

ট্রাম্প তাঁর ভাষণ “ইউএসএ” “ইউএসএ” ধ্বনির মাঝে শুরু করেন এবং তাঁর প্রশাসনের প্রথম ৪৩ দিন নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

“ছয় সপ্তাহ আগে আমি এই ক্যাপিটলের ছাদের তলায় দাঁড়িয়েছিলাম এবং আমেরিকার জন্য স্বর্ণযুগের সূচনার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই মূহুর্ত থেকে আমাদের দেশের ইতিহাসে সব চেয়ে মহৎ ও সফল যুগের সূচনার জন্য দ্রুত ও অবিচল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে,” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন।

ট্রাম্প বলেন, বহু সরকার যা করতে চার বা আট বছর সময় নেয়, তাঁর প্রশাসন তার চেয়ে বেশি কাজ ৪৩ দিনে অর্জন করেছে। তিনি এটাকে “কেবল সূচনা” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন যে আমেরিকা গতি ফিরে পেয়েছে।

“আমাদের চেতনা ফিরে এসেছে, আমাদের গৌরব ফিরে এসেছে , আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। আর আমেরিকার স্বপ্ন সম্প্রসারিত হচ্ছে , আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বৃহত্তর ও উন্নততর। আমেরিকান ড্রিম অপ্রতিরোধ্য, আর আমাদের দেশ আবার ফিরে আসার পথে যেমনটি বিশ্ব কখনই দেখেনি, এবং সম্ভবত আর কখনও দেখবে না,” তিনি বলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণের সময় রিপাবলিকান দলের সদস্যরা (ডান দিকে) উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন, কিন্তু বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যরা (বাঁ দিকে) অভিনন্দনে যোগ না দিয়ে বসে থাকেন। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৫।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণের সময় রিপাবলিকান দলের সদস্যরা (ডান দিকে) উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন, কিন্তু বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যরা (বাঁ দিকে) অভিনন্দনে যোগ না দিয়ে বসে থাকেন। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৫।

ভাষণের শুরুতে রিপাবলিকান দলের আইনপ্রণেতারা দাঁড়িয়ে হাততালি দেন, কিন্তু বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যরা বসে থাকেন। এক পর্যায়ে, ডেমোক্র্যাট সদস্যরা দুয়ো দুয়ো ধ্বনি দিলে রিপাবলিকানরা “ইউএসএ” ধ্বনি দিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য স্বাগত জানান।

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য আল গ্রিন বার বার প্রেসিডেন্টের ভাষণে বাধা দেয়ায় স্পিকার মাইক জনসন তাঁকে কক্ষ থেকে বহিষ্কার করেন।

গত বছর ছিল রিপাবলিকান দলের বিজয়ের বছর – প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পাশাপাশি রিপাবলিকানরা সেনেট এবং হাউজ অফ রেপ্রেজেন্টেটিভস-এর নিয়ন্ত্রণ দখল করে। অভিষেকের বছর ছাড়া অন্যান্য বছরে এই ভাষণকে সাধারণত 'স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন' বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

ট্রাম্প তাঁর নির্বাহী আদেশের বেশি কয়েকটির তালিকা পড়ে শোনান, যার মধ্যে ছিল দক্ষিণ সীমান্তে জরুরী অবস্থা ঘোষণা এবং “আমাদের দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন প্রতিহত “ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এবং বর্ডার প্যাট্রল মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত।

তিনি আরও বলেন, তিনি হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ফেডেরাল সরকারে নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছেন এবং বিদেশী সাহায্য স্থগিত করেছেন।

ট্রাম্প, তাঁর ভাষায় “অন্যায্য” প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, “দুর্নীতিগ্রস্ত” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং “আমেরিকা-বিদ্বেষী” জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছেন।

US Vice President JD Vance and Speaker of the House Mike Johnson (R-LA) applaud as US President Donald Trump speaks during an address to a joint session of Congress in the House Chamber of the US Capitol in Washington, DC, on March 4, 2025. (Photo by Win
কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সেনেটের সভাপতি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স (বাঁ দিকে) এবং হাউস অফ রেপ্রেজেন্টেটিভস-এর স্পিকার মাইক জনসন। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৫।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

গত বছরের নির্বাচনের সময় বড় ইস্যুগুলোর মধ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল অন্যতম। ট্রাম্প তাঁর ভাষণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোর জন্য তাঁর প্রশাসনের কাজের কথা উল্লেখ করেন।

“আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে আমাদের অর্থনীতিকে উদ্ধার করা এবং শ্রমজীবী পরিবারের জন্য নাটকীয় ও তাৎক্ষণিক স্বস্তি নিয়ে আসা,” তিনি বলেন।

ট্রাম্প দাবী করেন যে তিনি বিগত বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে “বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং মুদ্রাস্ফীতির দুঃস্বপ্ন” পেয়েছেন। তিনি জ্বালানি এবং মুদি-সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির জন্য বাইডেন প্রশাসনের নীতিমালার দোষারোপ করেন, এবং বলেন যে, “নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ লক্ষ লক্ষ আমেরিকানের সামর্থ্যের বাইরে চলে গিয়েছিল।”

“গত ৪৮ বছরে, সম্ভবত আমাদের দেশের ইতিহাসে আমরা সব চেয়ে মারাত্মক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়েছিলাম । প্রেসিডেন্ট হিসেবে, আমি এই ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসতে এবং আমেরিকার ব্যয়কে আবার সাধ্যমত করে তোলার জন্য প্রতিদিনই সংগ্রাম করছি,” তিনি বলেন।

সম্প্রতি বাজারে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক এবং জ্বালানী নীতি নিয়ে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

“জো বাইডেন বিশেষত ডিমের মূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দিয়েছিলেন – আর আমরা এই দাম কমাতে কঠোর পরিশ্রম করছি,” তিনি বলেন।

ট্রাম্প বলেন মুদ্রাস্ফীতিকে পরাস্ত করতে তিনি জ্বালানির মূল্য দ্রুত কমিয়ে আনার ব্যাপারে মনোযোগ দেবেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, পূর্ববর্তী প্রশাসন নতুন তেল ও গ্যাস ইজারা নেওয়ার সংখ্যা ৯৫% কমিয়ে ফেলে, পাইপ লাইন নির্মাণ থামিয়ে দেয় এবং ১০০ টিরও বেশি বিদ্যুৎ স্থাপনা বন্ধ করে দিয়েছিল।

“এমনটি আমরা আগে কখনও দেখিনি। আর সে জন্যেই আমার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই আমি জরুরি জাতীয় জ্বালানী ঘোষণা করি,” তিনি বলেন।

US Representative Nydia Velázquez (D-NY) protests as US President Donald Trump speaks during an address to a joint session of Congress at the US Capitol in Washington, DC, on March 4, 2025. (Photo by ALLISON ROBBERT / AFP)
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণের সময় ডেমোক্র্যাট দলের কংগ্রেস সদস্য নাদিয়া ভেলাযকুয়েয নীরব প্রতিবাদ করেন। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৫।

তিনি ঘোষণা দেন যে তাঁর প্রশাসন আলাস্কায় বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাস লাইন নির্মাণের কাজ করছে, যেটা হবে বিশ্বের বৃহত্তম, “ যেখানে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য দেশ আমাদের অংশীদার হতে চায়।”

এটা সত্যিই অত্যন্ত একটা চমৎকার ব্যাপার,” ট্রাম্প বলেন।

ট্রাম্প আরও ঘোষণা দেন যে, এ সপ্তাহে আরও পরের দিকে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি খনিজ পদার্থ ও ‘রেয়ার আর্থ’ এর উৎপাদন নাটকীয় ভাবে বাড়াতে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেবেন।

ইউক্রেনে শান্তি

ট্রাম্প ইউক্রেনে রাশিয়ার তিন বছরব্যাপী যুদ্ধ থামাতে তাঁর প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন, এবং ইউক্রেনের জন্য ইউরোপের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করার জন্য পূর্ববর্তী বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেন।

“আমি ইউক্রেনের নৃশংস সংঘাত বন্ধের জন্যও নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইউক্রেন ও রাশিয়ার লক্ষ লক্ষ লোক অযথাই নিহত বা আহত হচ্ছেন এই ভয়াবহ ও নৃশংস সংঘর্ষে, যা শেষ হবার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না,” তিনি বলেন।

ট্রাম্প বলেন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় সহায়তা দিতে শত শত বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, ইউরোপ রাশিয়ার তেল ও গ্যাস ক্রয়ের জন্য যত অর্থ ব্যয় করেছে ততটা ব্যয় করেনি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করতে।

“আর ইউরোপ এই যুদ্ধের জন্য যা খরচ করেছে, বাইডেন আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করেন,” তিন বলেন।

গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির সঙ্গে বাগবিতণ্ডার পর ট্রাম্প সংবাদদাতাদের জানান, তিনি মনে করেন না ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া, ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর উদ্ভূত সংঘাতের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার বিষয়টির উপযুক্ত স্বীকৃতি দিয়েছে কিয়েভ।

কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণের সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেল (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়), যিনি সম্প্রতি রাশিয়ার জেল থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছেন। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৫।
কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণের সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেল (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়), যিনি সম্প্রতি রাশিয়ার জেল থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছেন। ফটোঃ ৪ মার্চ, ২০২৫।

ওভাল অফিসে বৈঠকের সময় ইউক্রেনের রেয়ার আর্থ খনিজ নিয়ে একটি চুক্তি সাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক ভেস্তে গেলে চুক্তি সাক্ষর হয়নি। শান্তি চুক্তিতে জেলেন্সকি যুক্তরাষ্ট্রের “নিরাপত্তা গ্যারান্টি” দাবী করার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে জেলেন্সকি শান্তি চায় না।

জেলেন্সকি অবশ্য মঙ্গলবার বলেন যে তার দেশ "যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি" রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করতে রাজি এবং শান্তি চুক্তিতে পৌঁছতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের "শক্তিশালী নেতৃত্বের" আওতায় তারা কাজ করবে।

প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি বলেন, গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সাথে তার বাকবিতণ্ডা "দুঃখজনক" ছিল এবং তিনি ইউক্রেনের রেয়ার আর্থ খনিজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ মেয়াদী অধিকার সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত যা আমেরিকার প্রযুক্তি নির্মাণকারীদের কাজে লাগবে

অবৈধ অভিবাসন

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ভাষণে দক্ষিণ সীমান্ত সংরক্ষণ এবং অবৈধ অভিবাসন কমাতে তাঁর প্রশাসনের প্রচেষ্টা তুলে ধরেন। তিনি ২২-বছর বয়সী ছাত্রী লেকেন রাইলি’র কথা বলেন, যাকে একজন বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসন-প্রত্যাশী গত বছর জর্জিয়া রাজ্যের এথেন্স শহরে হত্যা করে।

“দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার প্রশাসন সীমান্ত ও অভিবাসন ব্যবস্থায় আমেরিকান ইতিহাসে সব চেয়ে ঢালাও ভাবে অভিযান চালায় এবং আমরা দ্রুতই দেখি আগে যে কোন সময়ের তুলনায় অবৈধ ভাবে সীমান্ত পারাপারকারীদের সংখ্যা হ্রাস পায়,” তিনি বলেন।

“সংবাদ মাধ্যম এবং ডেমোক্র্যাট পার্টিতে আমাদের বন্ধুরা বলেন সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য আমাদের নতুন আইনের প্রয়োজন। তবে দেখা গেল, যে প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রয়োজন ছিল একজন নতুন প্রেসিডেন্ট,” ট্রাম্প বলেন।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টম হোম্যান সিএনএনের ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে বলেন, ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের অভিষেকের পর থেকে ১৪ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। টম হোম্যান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘বর্ডার জার’ হিসাবে পরিচিত।

গ্রেপ্তারকৃতদের অনেককে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বা কিউবার গুয়ানতানামো বে-তে যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটির কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আবার কয়েকজনকে আদালতে মামলা চলমান থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব অনুযায়ী, ১ কোটি ১০ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনের সময় "লাখ লাখ" অনিবন্ধিত অভিবাসীকে খুঁজে বের করে বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত অভিবাসীদের লক্ষ্য করে গ্রেপ্তার কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। তবে যথাযথ অভিবাসনের কাগজপত্র ছাড়া দেশটিতে বসবাসরত যে কেউ এর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

ট্রাম্প বলেন যে তিনি এই “হুমকি” অবসানের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা কংগ্রেস বরাদ্দ করবে।

“আমি কংগ্রেসকে অর্থায়নের বিস্তারিত অনুরোধ জানিয়েছি যাতে এটা নির্ধারণ করা যায় যে কি ভাবে এই সব হুমকির অবসান ঘটাবো, আমাদের দেশকে সুরক্ষিত করবো এবং আমেরিকান ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকের বহিষ্কার অভিযান চালাবো যা কীনা ডোয়াইট ডি আইসেনহাওয়ারের সময়ের চেয়ে ও বেশি হবে, যিনি নরমপন্থি লোক ছিলেন কিন্তু সীমান্তের ব্যাপারে ছিলেন কঠোর,” তিনি বলেন।

“আমেরিকানরা আশা করেন যে কোন বিলম্ব ছাড়াই কংগ্রেস এই অর্থায়নের বিষয়টি আমার কাছে পাঠাবে যাতে আমি স্বাক্ষর করে এটিকে আইনে পরিণত করতে পারি।”

শুল্ক নিয়ে পাল্টা-পাল্টি

ট্রাম্প তাঁর সম্প্রতি ঘোষিত পাল্টা-পালটি শুল্ক নীতি নিয়ে বলেন যে, অন্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর যে ধরনের শুল্ক ধার্য করবে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্যের উপর একই ধরনের শুল্ক বসাবে।

“তারা আমাদের উপর যেমন শুল্ক আরোপ করবে, আমরা তাদের উপরও শুল্ক আরোপ করবো। তারা আমাদের যত কর আরোপ করে, আমরাও তাদের উপর কর আরোপ করবো,” তিনি বলেন। “তারা যদি আমাদেরকে তাদের বাজারের বাইরে রাখতে আমাদের উপর অর্থ-বিহীন শুল্ক আরোপ করে, তা হলে আমরা ও আমাদের বাজারের তাদের প্রবেশ রুদ্ধ করতে অর্থ-বিহীন শুল্ক আরোপ করবো।”

“আমরা বহু ট্রিলিয়ন ডলার নেবো এবং এমন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবো যেমনটি আমরা আগে কখনও দেখিনি,” ট্রাম্প বলেন।

তবে শুল্ক শুধু পাল্টা জবাব হিসেবেই ধার্য করা হচ্ছে না। যেমন, কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের উপর ট্রাম্প শুল্ক ধার্য করেছে ভিন্ন কারণে।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র তার দুটি বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার মেক্সিকো এবং কানাডা থেকে আমদানির ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি অনুসারে, প্রতিবেশী দেশগুলো অবৈধ অভিবাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ মাদকের প্রবাহ হ্রাস করার প্রমাণ উপেক্ষা করে এই শুল্ক আরোপ করা হলো।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তার দেশ "এই অন্যায্য সিদ্ধান্তকে বিনা উত্তরে ছেড়ে দেবে না।" তিনি ঘোষণা করেন, তিনি সাড়ে ১৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের আমেরিকান পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবম ইঙ্গিত দেন, তার দেশও পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে। মেক্সিকোর অর্থনীতি বাণিজ্য নির্ভর; তাদের রপ্তানির ৮০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার চীনে পণ্যের উপরও নতুন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে ৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, এখন সেটা দ্বিগুণ হলো। ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ফেন্টানল পাচারের উৎস হিসেবে চীনকে দায়ী করেছেন।

বিচার ব্যবস্থা

ট্রাম্পের ভাষণের মূল মনোযোগ ছিল আভ্যন্তরীণ বিষয়ে, যেমন আমেরিকার শহরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উপর তিনি জোর দেন।

“আমরা যখন আমাদের সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করছি, আমাদেরকে আমাদের শহরগুলিতে আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে,” তিনি বলেন।

ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে, তাঁর ভাষায়, “চরম বামপন্থি উন্মাদেরা” দেশের বিচার ব্যবস্থা বিনষ্ট করেছে।

তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই যারা বার বার বিপজ্জনক ভাবে আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না, “অথচ আমার মতো রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়।” যেটা ছিল বিগত চার বছরে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি ফৌজদারি মামলার প্রতি একটি ইঙ্গিত।

তিনি বলেন যে ফেডেরাল তদন্ত সংস্থা এবং ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হবে না।

“আমার প্রশাসন এফবিআই ও ডিওজে থেকে শুরু করে সাংবিধানিক আইনের শাসনের অধীনে ন্যায়সঙ্গত ,সমতাভিত্তিক ও নিরপেক্ষ বিচার ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ও চূড়ান্ত ভাবে কাজ করেছে,” তিনি বলেন।

ট্রাম্প তাঁর প্রায় দু-ঘণ্টাব্যাপী ভাষণের শেষে বলেন, “আমেরিকার স্বর্ণ যুগ সবে শুরু হয়েছে। ঈশ্বর আমেরিকাকে আশীর্বাদ করুন।”

XS
SM
MD
LG