বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে শ্রম আইন সংস্কার করে বিশ্বমানের করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস।
বুধবার (৫ মার্চ) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ নির্দেশনা দেন। ১০ থেকে ২০ মার্চ জেনেভায় অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৫৩তম অধিবেশনকে সামনে রেখে এ বৈঠক অনুষ্ঠিক হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন আইএলও অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের ইতিবাচক সবকিছু করতে হবে এবং কাজগুলো করতে হবে। আমরা এখানে কোনো অজুহাত তৈরি করতে আসিনি।”
বাংলাদেশের শ্রম খাতের শ্রমিকদের জন্য বীমা কভারেজ এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
জেনেভায় আইএলও অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে অনলাইনে বৈঠকে যোগ দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে শ্রম খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, “কিছু ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনুভূতি হচ্ছে, আমরা এখনো কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পৌঁছাতে পারিনি।”
উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন, সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের এবং আইএলওর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ টুমো পৌটিয়ানেন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।
শ্রমিকপক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত
এদিকে শ্রমিকপক্ষের অনেক আপত্তি আমলে না নিয়েই শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
ঢাকার দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০-২০ মার্চ অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে খসড়াটি উপস্থাপন করা হবে।
তবে চলতি মার্চ মাসের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হচ্ছে না। কারণ, আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠকের পর মার্চ মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা যাবে না। শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থেকে অনুমোদন হওয়ার পর অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে। সে ক্ষেত্রে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ৬টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) কাছে এ তথ্য জানিয়ে শ্রমিকপক্ষ বলেছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত বিবেচনা করা হয়েছে পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা। এমনকি শ্রমিকের সংজ্ঞাটিও ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের ভবিষ্য তহবিল ও গ্র্যাচুইটি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। রাখা হচ্ছে না স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারও। ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে আইএলওর বিধানও মানতে পারছে না সরকার। মাতৃত্বকালীন ছুটি, চাকরির নিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকালে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের দায় নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে শ্রমিকপক্ষের মতামত আমলে নেওয়া হয়নি।
শ্রমিকনেতা ও টিসিসিতে নিযুক্ত শ্রমিকপক্ষের সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন প্রথম আলোকে বলেন, “শ্রম আইনের সংশোধনীটি শ্রমিকবান্ধব হচ্ছে না। আইএলও কনভেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, এমন পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে।”
তিনি বলেন, “মাতৃত্বকালীন ছুটি সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ৬ মাস, পোশাক খাতের জন্য ৪ মাস। আবার অনানুষ্ঠানিক খাতে ছুটির বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। আমরা চাই মাতৃত্বকালীন ছুটি সবার জন্য একই হোক। কিন্তু শ্রম আইনে তা করা হচ্ছে না।”
শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, “আইন সংশোধনের খসড়াটি যে চূড়ান্ত করা হয়েছে, আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠকে তা আমরা তুলে ধরতে পারব।” এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।