কঠোর কোভিড বিধিনিষেধের জন্য হতাশ তাইওয়ানের পাইলট, কেবিন ক্রুরা

তাইওয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল প্রকাশিত এই ছবিতে, মেমফিস থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বহনকারী একটি চায়না এয়ারলাইন্সের কার্গো বিমান তাইপেয়ের বাইরে বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। ২০ জুন, ২০২১। (ফাইল ছবি)

তাইওয়ানের অন্যতম প্রধান এয়ারলাইন ক্যারিয়ারের ফ্লাইট ক্রুরা ক্রমাগত কোভিড-১৯ নীতিমালার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। ওই নীতিমালার আওতায় তাদের বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর কোয়ারেন্টিন এবং পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তাগুলি মেনে চলতে হচ্ছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি মহামারী বিধিনিষেধ শিথিল করে, একটি "নতুন স্বাভাবিক" নিয়ম এর সাথে খাপ খাইয়ে নিলেও, তাইওয়ান এখনো আগের নীতিগুলিই বহাল রেখেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না এয়ারলাইন্সের একজন পাইলট, ভিওএ-কে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি প্রচণ্ড রকম "হতাশ"।

তিনি বলেন, “এটি সত্যিই আমাকে প্রভাবিত করছে। যখনই আমি কাজে যাই, খুবই হতাশ বোধ করি... এর মানে হল আমি দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ি ফিরে যেতে পারি না, এবং আমি এখন সত্যিই খুব ক্লান্ত, কারণ আমাকে ক্রমাগত তাইপেইতে যেতে হয়, নাহলে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপ। সুতরাং, আমাকে এই পরিস্থিতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে হবে, আরও ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে এবং আরও ইতিবাচক হতে হবে। হোটেলের একটি ছোট কক্ষে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকা সত্যিই অস্বস্তিকর। কি আর করা, আমাকে এখন এভাবেই অভ্যস্ত হতে হবে।”

অপর একজন ফার্স্ট অফিসার প্রায় আট বছর ধরে একটি এয়ারলাইন্সের জন্য কাজ করছেন, এবং তিনি প্রতি মাসে দীর্ঘ এবং স্বল্প উভয় দূরত্বের ট্রিপেই উড়ে যান। তিনি বলেন, মহামারীর শুরুতে বিধিনিষেধগুলি আরও খারাপ ছিল, কারণ পাইলটদের ডিউটির সময় গগলস, গ্লাভস এবং ফেস মাস্ক পরতে বাধ্য করা হয়েছিল, পাশাপাশি সাত দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই একজন পাইলটের দ্রুত ফিরে ফিরে যাওয়া আসার কারণে, ওই পাইলট বর্ণনা করেছেন, তিনি কীভাবে বার বার কোয়ারেন্টিনে থাকার একটি অব্যাহত চক্রের মধ্যে আটকে ছিলেন।

তিনি বলেন, "এমন একটা সময় ছিল, যখন আমরা বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করতে পারিনি, শুধুমাত্র হোটেলে হোটেলেই আমাদের থাকতে হয়েছে। এমনও হয়েছে যে, একটানা ২২ দিন পর্যন্ত আমি বাড়ি যেতে পারিনি।"

তবে এখন, তাইওয়ানে হোম কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজনীয়তা সরিয়ে, টিকা নিয়েছেন এমন ফ্লাইট ক্রুদের নিয়মগুলি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু যখন পাইলট এবং ক্রুরা বিদেশে যান, তখনও তাদের হোটেল রুম থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, “আউট স্টেশনগুলিতে, আমরা এখনও বাইরে যেতে পারি না। পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য আমাদের পিকআপের সময় পর্যন্ত আমাদের কেবল রুমেই থাকতে হয়। এটা সত্যিই অস্বাস্থ্যকর, সারাদিন টিভি দেখা, বই পড়া এবং ঘুমানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

তবে, তাইওয়ানের একটি স্থানীয় পাইলট ইউনিয়ন এখন কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করতে চাইছে।

তাইওয়ানের এয়ারলাইন্সের জন্য কাজ করা প্রায় অর্ধেক পাইলটদের প্রতিনিধিত্ব করে পাইলট ইউনিয়ন তাওয়ুয়ান। তারা এই ব্যবস্থাগুলিকে "সেকেলে" বলে অভিহিত করে, তাইওয়ান সরকারকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ সহজ করার অনুরোধ করছে।

কেবিন ক্রুরাও এই কঠোর নিয়ম সম্পর্কে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে, নিষেধাজ্ঞাগুলি অনুসরণ করা সত্যিই জেলে থাকার মতো।

শার্লি (ছদ্মনাম) নামের চায়না এয়ারলাইন্সের একজন কেবিন ক্রু সদস্য বলেন, তিনি সেখানে প্রায় সাত বছর ধরে কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, মহামারী শুরুর আগে, কেবিন ক্রু সদস্যরা প্রায়শই কেনাকাটা করতে যেতেন, কফি খেতেন বা বিদেশে থাকাকালীন গ্রীষ্মকালটা উপভোগ করতেন।

তিনি বলেন,"এভাবেই ক্রু সদস্যরা মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকতেন,"।

কিন্তু, এই দীর্ঘায়িত বিধিনিষেধ আরোপের ফলে তিনি বলেন, তাইওয়ানের ফ্লাইট ক্রুদের সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সত্যিই অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে।

২ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটিতে মহামারীর শুরুতে সংক্রমণ কিছুটা কম দেখা দিলেও, বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন ২৫,০০০ এর বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা ওয়েবসাইট অনুসারে, টিকা দেওয়ার দিক থেকে অবশ্য বেশ এগিয়েই আছে তাইওয়ান। দেশটির জনসংখ্যার শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছে।