আর্থিকভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে থাকা পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়া এবং দেশটিকে ঋণ খেলাপির হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবারের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদনের আশায় এই সপ্তাহে কঠোর আলোচনায় বসেছে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা এবং সফরকারী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ-এর একটি প্রতিনিধিদল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাসবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকির সাথে অর্থনৈতিক সংকট এমন এক পর্যায়ে দেশটিকে নামিয়ে এনেছে , যা অতীতে যেমন বারবার সামরিক শাসনের পথে দেশটিকে নিয়ে গেছে, তেমনই একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স সোমবার জানিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি থেকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল ইসলামাবাদে রয়েছে, কিন্তু এখনও বিদেশি ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা এড়াতে দেশটির ঠিক কত অর্থের প্রয়োজন, তা নিয়ে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাথে তাঁরা এখনো একমত হতে পারেননি।
মাত্র ৩৫০ কোটি ডলার রিজার্ভ পাকিস্তানের হাতে আছে, কিন্তু আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মূল এবং সুদের পরিশোধে ৯০০ কোটি ডলারেরও বেশি বকেয়া পাওনা রয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে মুদ্রাস্ফীতি ২৫% ছাড়িয়ে গেছে এবং দেশের মুদ্রার মূল্য ঐতিহাসিক পর্যায়ে সর্ব নিম্নে নেমে গেছে। এছাড়া, জ্বালানি খাতে পাকিস্তানের ১,৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ,আইএমএফের সাথে আলোচনায় আরেকটি বিতর্কিত বিষয়।
"পাকিস্তান অর্থনৈতিক পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে," বলেছেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও নীতি নিযুক্তির অধ্যাপক জন সিওরসিয়ারি।
সিওরসিয়ারি ভিওএ-কে বলেছেন, “যদি এভাবে সঙ্কট চলতেই থাকে, তাহলে সরকার শীঘ্রই যথেষ্ট অতিরিক্ত অস্থিরতার মুখোমুখি হতে পারে এবং অভ্যন্তরীন সামাজিক সংঘাতকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই অবস্থা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যেখানে সামরিক বাহিনী প্রায়শই ব্যারাক থেকে শাসন জাহির করার জন্য বেরিয়ে আসে।”
পাকিস্তানের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল পরামর্শ দিয়েছেন, পাকিস্তানকে সচল রাখতে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
পাকিস্তানি তালিবান এবং ইসলামিক স্টেট গ্রুপের নিরবচ্ছিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা হুমকি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
গত ৩০ জানুয়ারী পেশোয়ারে একটি মসজিদের ভিতরে আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে ১০০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন লোক আহত হন।
ইসমাইল বলেন, অর্থনীতি ভেঙে পড়লে কিংবা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আরও অবনতি হলে সেনাবাহিনী অতীতের মতোই দেশটিতে হস্তক্ষেপ করবে।
পাকিস্তানের বেসামরিক নেতা এবং রাজনীতিবিদদের বেপরোয়া দুর্নীতি ও অযোগ্যতার জন্য দায়ী করা হলেও, সেনাবাহিনী কিন্তু ঠিকই তার শক্তি ও শৃঙ্খলার ভাবমূর্তি বজায় রেখেছে।