তুরস্কে ভূমিকম্প: আরও কয়েকজনকে উদ্ধার, ক্ষীণ হয়ে আসছে আশা

তুরস্কের কাহরামনমারাসে নূর বায়রাক্তারকে উদ্ধারের জন্য একটি ক্রেন ব্যবহার করা হয়। তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানির চার দিন পর শুক্রবার জরুরি উদ্ধার কর্মীরা এই নাটকীয় উদ্ধার অভিযান চালায়; (১০ ফেব্রুয়ারি,২০২৩)।

ভূমিকম্পের চার দিন পর, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া তুরস্ক ও সিরিয়ায় আরো মানুষকে উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। তবে শুক্রবার তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের হাতায়ে প্রদেশের ধ্বংসাবশেষ থেকে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে যাদের মধ্যে একজন নারী এবং তার ছয় মাস বয়সী কন্যাসন্তান ও ছিল । চারদিন আগে দেশ দুটিতে ৭ দশমিক ৮ ও ৭ দশমিক ৫ মাত্রার দু’টি ভূমিকম্প আঘাত হানে।

কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় আঘাত হানা দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এখন ২৪ হাজারের বেশি। এটি, ২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামির পর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প। ঐ সিসমিক ঘটনায় জাপানে ২০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান শুক্রবার আদিয়ামান প্রদেশ পরিদর্শন করেন। ঐ সময় তিনি স্বীকার করেন যে এ সপ্তাহের ভূমিকম্পের পর সরকার আরো দ্রুত সাড়া দিতে পারতো।তিনি বলেন, "যদিও আমাদের কাছে এই মুহূর্তে বিশ্বের বৃহত্তম অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল রয়েছে, তবে বাস্তবতা এই যে, আমরা যতটা দ্রুততায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু হোক চেয়েছিলাম, ততটা দ্রুততায় তা শুরু হয়নি।”

এরদোয়ান ভূমিকম্পে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে সাত দিনের জাতীয় শোক ও তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

এরদোয়ান এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ উভয়েই সংকট মোকাবেলায় তাদের সরকারের পদক্ষেপের গতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন।

আসাদ এবং তার স্ত্রী শুক্রবার সরকার নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পো শহরে একটি হাসপাতালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে প্রথম দেখা করেন।এই শহরটি দেশটিতে কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় বোমা হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভূমিকম্প নিয়ে জরুরি বৈঠকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট সভাপতিত্ব করছেন, এমন দৃশ্য টেলিভিশনে দেখা গেলেও, দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি কোন ভাষণ দেননি বা দুর্যোগ নিয়ে কোনো সংবাদ সম্মেলনও করেননি।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শুক্রবার জানিয়েছে, সরকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিরোধী নিয়ন্ত্রিত এলাকাসহ দেশের সব অংশে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। এই উদ্যোগ বেঁচে যাওয়াদের সহায়তা দ্রুততর করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুক্রবার জানিয়েছে, তারা তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭২ টন জীবন রক্ষাকারী উপকরণ পাঠিয়েছে, যা এক লাখ মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে।

শক্তিশালী ভূমিকম্পের চার দিনেরও বেশি সময় পরে, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের আশা হ্রাস পাচ্ছে। তবে কয়েক ডজন দেশের উদ্ধারদলসহ, হাজার হাজার উদ্ধারকারী জীবিতদের সন্ধানে দিন-রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত সংবাদদাতাদের বলেছেন যে তার দেশের উদ্ধারকারী দল হাতায় প্রদেশে শুক্রবার এক মা ও ছয়মাস বয়সী শিশুকে উদ্ধার করেছে। এই উদ্ধারকারী দল সোমবার সেখানে যোগ দেয়।

আরো ভালোভাবে উদ্ধার তৎপরতা সমন্বয় করার লক্ষ্যে, জাতিসংঘের দুর্যোগ মূল্যায়ন ও সমন্বয় (ইউএনডিএসি)-এর একটি দলকে তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অপারেশন সেন্টারে নিয়োজিত করা হয়েছে।