ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায়, জেরুজালেম ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি পদক্ষেপের কারণে, আঞ্চলিক অস্থিরতা আরও খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে। রবিবার একথা বলে সতর্ক করেছেন আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর কয়েক ডজন নেতা ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
কায়রোতে অনুষ্ঠিত ঐ বৈঠকে অংশ নেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ অনেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
জেরুজালেম এবং প্রতিবেশী ইসরাইলি অধিকৃত অঞ্চলে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী লড়াইয়ের মধ্যেই এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর, এ সময়ে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইল পক্ষের ১০ জনকে হত্যা করেছে।
বৈঠকে বক্তারা জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলের “একতরফা পদক্ষেপের” নিন্দা জানানা। তারা ইসরাইলের বাড়িঘর ধ্বংস করা এবং বসতি সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের নিন্দা জানান।
জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোতে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনেরও নিন্দা জানিয়েছে তারা। এই স্থানগুলো মুসলিম ও ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র এবং এগুলো প্রায়শই ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে।
এ বিষয়ে ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদের রক্ষক হিসাবে জর্ডানের ভূমিকার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন। মসজিদটি পুরাতন জেরুজালেমের একটি পাহাড়চূড়ায় নির্মিত। এটি ইহুদিদের জন্য পবিত্রতম স্থান। এটাকে তারা টেম্পল মাউন্ট বলে অভিহিত করে।কারণ প্রাচীন-কথায় এটা ইহুদিদের মন্দির বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরাইল এই স্থানটি দখল করার পর, ইহুদিদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে সেখানে প্রার্থনা করার অনুমতি পায়নি তারা। ইসরাইল পুরো জেরুজালেমকে তাদের অবিভক্ত রাজধানী বলে দাবি করে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায়।
জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের মেরুদন্ড আখ্যায়িত করে, মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি এই পবিত্র স্থানের স্থিতাবস্থা বদলে ফেলার জন্য ইসরাইলের যে কোনো পদক্ষেপের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, এটি ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিষ্পত্তির জন্য ভবিষ্যতের আলোচনায় “নেতিবাচক প্রভাব” ফেলবে।
বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলের অযাচিত প্রবেশ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “ফিলিস্তিন ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি ছাড়া এ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসবে না।“
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনী প্রশাসন দুই-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের জন্য নেওয়া জাতিসংঘ প্রস্তাবকে রক্ষা করতে বার বার জাতিসংঘ এবং এর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে যাবে এবং দাবি জানাবে। তিনি বলেন, “আমাদের জনগণের আইনসঙ্গত অধিকার রক্ষায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আদালত ও সংস্থার কাছে অব্যহতভাবে আবেদন জানাবে।”