বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার টংকাবতী থেকে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরকিয়ার প্রশিক্ষণ কমান্ডারসহ ৯ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (১৩ মার্চ) সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ১, ১১ ও ১৫ সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ তাদের গ্রেপ্তার করে।”
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন; জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরকিয়ার ট্রেনিং কমান্ডার দিদার হোসেন ওরফে মাসুম, আলামিন সরদার, সাইনুন রায়হান, তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাভেল, মো. লোকমান মিয়া, মো. ইমরান হোসেন, মো. আমির হোসেন, মো. আরিফুল রহমান ও শামীম মিয়া।
আল মঈন বলেন, “নতুন গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সহ এ পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৬৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে দু’জন মারা গেছে।”
তিনি আরো বলেন, “সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ১৭ সদস্যকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকও জব্দ করা হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।