কোনো মামলা ছাড়াই বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার সুলতানা জেসমিনকে (৪৫) র্যাবের হেফাজতে নেয়া থেকে শুরু করে, হাসপাতালে নেয়ার আগ পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া ছিলো তা আইনগতভাবে কতটুকু সঠিক ছিলো তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে করা এক রিটের শুনানিকালে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ এসব প্রশ্নের জবাব চান।
আদালত প্রশ্ন তুলেছেন, আটকের পর সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিলো কিনা এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া আইনগতভাবে হয়েছে কিনা? তাকে একটা অভিযোগের ভিত্তিতে তুলে নেয়া র্যাবের জুরিসডিকশনে (এখতিয়ারে) ছিলো কিনা? রাষ্ট্রপক্ষকে আগামী বুধবারের মধ্যে এসব প্রশ্নের জবাব দাখিল করতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে ঐ দিন বেলা ২টায় এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ধার্য করেছেন।
এর আগে, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর গত সোমবার আদালতের নজরে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ চেয়েছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। শুনানির পর হেফাজতে ঐ নারীর মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা এবং মৃত্যুর কারণ জানতে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেখতে চান আদালত।
সুলতানা জেসমিনকে আটকের কারণ, স্থান, সময়, হেফাজতে নেয়ার কারণ, জিজ্ঞাসাবাদ সুনির্দিষ্ট তথ্যও চান আদালত। এসব তথ্য জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে এক দিনের সময় দেওয়া হয়।আর আদালতের দৃষ্টিতে আনা আইনজীবীকে বলা হয় রিট আবেদন নিয়ে আসতে।
নির্দেশমত মঙ্গলবার আদালতে প্রতিবেদন দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছিলো না। অন্যদিকে, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ও র্যাবের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন ঐ আইনজীবী।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।