প্রভাবশালী ইরানি সুন্নি মুসলিম আলেম আবদুল হামিদ ইসমাইলজেহি, জাহেদান শহরে শুক্রবারের খুতবায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সমালোচনা করেন। আবদুল হামিদ ইসমাইলজেহি, মৌলভী আবদুল হামিদ নামে পরিচিত। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য গণভোটের প্রয়োজন হবে না, যদি কর্তৃপক্ষ জনগণের কথা শোনে।
মৌলভী আবদুল হামিদ শুক্রবার বলেন, বিশ্বের প্রতিটি সরকারকেই, তা সে হউক, ইসলামী বা অ-ইসলামী, তাদের অবশ্যই জনগণের সাথে থাকতে হবে। কেউই অস্ত্রের জোরে টিকে থাকতে পারে না। আলী খামেনির নাম উল্লেখ না করলেও তিনি কার কথা বলছেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, জনগণ গণভোটের অনুরোধ করছে কারণ তারা তাদের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হতাশ এবং তাদের দাবি উপেক্ষিত। হামিদ বলেন "একজন নেতা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলাফল যখন পূর্বনির্ধারিত তখন গণভোটের প্রয়োজন কী? জনগণের কান্না শুনতে এবং তাদের ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এই জনতাই তো ১৯৭৯ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ভোট দিয়েছিলো।“
গত মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে গণভোট আয়োজনের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন; যদিও বিরোধীরা বার বার গণভোটের দাবি করে আসছে। আবদুল হামিদ জোর দিয়ে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠার একমাত্র উপায় হচ্ছে গণভোটের আয়োজন করা। যাতে, ইরানে কোন ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠন করা উচিত, জনগণ তা নির্ধারণ করতে পারে।
আবদুল হামিদ তার বক্তব্যের অন্য অংশে বলেন, “আলেমদের প্রতি আমার উপদেশ হলো জনগণের পাশে থাকুন। আর, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আমার উপদেশ হলো জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না। আপনারা জনগণের সন্তান। মানুষ যদি পরিবর্তন চায়, তাহলে আপনারা নিজেদের পরিবর্তন করুন"।
তেল খাতের চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের ধর্মঘটের কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, জাতীয় মুদ্রা প্রায় সম্পূর্ণরূপে তার মূল্য হারিয়েছে। জনগণের আর্থিক সমস্যা যখন গুরুতর, কর্তৃপক্ষ তখন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন,“দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ আমাদের দেশে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন আমরা দেখছি, শ্রমিক ও কারখানাগুলো ব্যাপক হারে ধর্মঘটে গেছে। শ্রমিকরা এখন আর বেতন দিয়ে চলতে পারেন না। অনেকেই আছেন, তাদের বেতন এতো কম যে তারা রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন।”
পরে তিনি তার খুতবায় হামিদ বলেন, নেতৃবৃন্দ জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে বিচার ব্যবস্থা রক্তাক্ত শুক্রবারের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করবে। এখন তারা বলছেন কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না; কারণ তারা জানেন না কে গুলি করেছে। তিনি আরো বলেন, “ আপনারা কী করে বাসিজ মিলিশিয়ার সেই খুনিকে ধরলেন এবং সেই খুনির ওপর প্রতিশোধ নিলেন? জনগণ যখন নিরাপত্তা বাহিনীর কাউকে হত্যা করে তখন আপনারা তা তাৎক্ষণিকভাবে খুঁজে বের করতে পারেন; যখন তারা জনগণকে হত্যা করে তখন আপনারা তাদের খুঁজে পান না।”
গত ৩০ সেপ্টেম্বর, পাকিস্তান সীমান্তে ইরানের অশান্ত সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী জাহেদানে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভে শুরু হলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি বর্ষণ করে। সেই দিনটিকে রক্তাক্ত শুক্রবার বলা হয়।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি এবং রয়টার্স থেকে নেয়া।