আগামী সপ্তাহে বাখমুথ থেকে যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করা হবে: ওয়াগনার গ্রুপ প্রধান

ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন একটি বিবৃতি দিচ্ছেন । মে ৫, ২০২৩।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলেছে, রাশিয়া তাদের বিশাল রেল ব্যবস্থাকে ক্রমবর্ধমান অন্তর্ঘাতের হাত থেকে রক্ষা করতে সম্ভবত অত্যন্ত অক্ষম।

·ইউক্রেন তাদের ত্রুটিপূর্ণ ড্রোনকে কিয়েভের আকাশ থেকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

. কিয়েভ ও ওডেসাকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা।

ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান শুক্রবার বলেছেন,পর্যাপ্ত গোলাবারুদ না থাকার কারণে, ইউক্রেনের শহর বাখমুত থেকে ১০ মে তিনি তার যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন বলেন, গোলাবারুদ-এর অভাবে তার ভাড়াটে সামরিক ইউনিটগুলো “অর্থহীন মৃত্যর মধ্য দিয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে” ।
প্রিগোঝিন বেশ কিছু দিন ধরে অভিযোগ করছিলেন যে, ইউক্রেনে নিয়োজিত তার ভাড়াটে বাহিনী রাশিয়ার কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পায়নি।

এদিকে, আঙ্কারায়, ব্ল্যাক সী ইকোনমিক কোঅপারেশন-এর বৈঠকে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। রুশ প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার নেয়ার সময়, তার পেছন থেকে ইউক্রেনীয় পতাকা ইউক্রেনের প্রতিনিধির কাছ থেকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে এই ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

ইউক্রনের সীমান্ত এলাকায় রাশিয়ার রেল দুর্ঘটনার ‘সাম্প্রতিক বৃদ্ধিকে “অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের ঘটানো অন্তর্ঘাত” বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

শুক্রবার টুইটারে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এই হামলা ‘প্রায় নিশ্চিতভাবে’ রাশিয়ার সামরিক রেল চলাচলে স্থানীয়ভাবে স্বল্প সময়ের জন্য বাধার সৃষ্টি করেছে।

মন্ত্রকটি বলেছে, রাশিয়ার রেলওয়ে বাহিনীর ব্রিগেডগুলো দ্রুততার সাথে রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম। তবে, এই হামলা রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীকে ক্রমবর্ধমান হারে চাপে ফেলবে এবং “হামলার হাত থেকে রাশিয়ার বিশাল ও নাজুক রেলপথকে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করার সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে কমে যাবে।”

এদিকে, কয়েকটি ড্রোনের একটি মধ্য কিয়েভের আকাশে অস্বাভাবিক (ত্রুটিপূর্ণ) আচরণ করায় ইউক্রেন এটিকে বৃহস্পতিবার গুলি করে ভূপতিত করেছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট বলা হয়েছিলো, মানুষবিহীন আকাশযান বাইরাক্টার টিবি-২ ছিল একটি শত্রুপক্ষের ড্রোন।পরে বিমান বাহিনী জানিয়েছে যে, এই আকাশযানটি ছিলো ইউক্রেনীয়।

এক বিবৃতিতে বিমান বাহিনী বলেছে, আকাশে এই নিয়ন্ত্রণহীন ড্রোনের উপস্থিতি ‘অনভিপ্রেত ফলাফল’ ডেকে আনতে পারতো।

ড্রোনটিকে গুলি করে ভূপতিত করার সময় কেউ আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে বৃহস্পতিবার, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তিনি মনে করেন যে ইউক্রেন মস্কোর আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শেষপর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক বিচারের মুখোমুখি হবেন।

দ্য হেইগ-এ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দেয়া বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, “ রাশিয়ার একটি মাত্র অপরাধ সকল অপরাধের জন্ম দিয়েছে; তা হলো আগ্রাসন। এটি হলো সকল দুষ্কর্মের শুরু, প্রথম অপরাধ। এই অপরাধের দায় নিতেই হবে।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে মার্চ মাসে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। ইউক্রেনীয় শিশুদের রাশিয়াতে নির্বাসন ও স্থানান্তরে জড়িত থাকার অভিযোগে পুতিনকে অভিযুক্ত করা হয়। জেলেন্সকি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইনের রাজধানীতে, ঠিক এখানে, এই সকল অপরাধমূলক কাজের জন্য পুতিনের শাস্তি হওয়া উচিৎ।”

তিনি বলেন,”এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা যখন জিতবো তখন এটা ঘটতে দেখবো; এবং আমরা জিতবোই।”

আইসিসি আগ্রাসনের জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে পারে না। কিন্তু, জেলেন্সকি এই সর্বগ্রাসী অপরাধের বিচার করতে একটি পূর্ণাঙ্গ ট্রাইবুনাল গঠনের আবেদন করেন।

তিনি বলেন,”আমরা যদি প্রকৃত ন্যায়বিচার চাই, আমাদের কোনো অজুহাত খোঁজা উচিত নয় এবং বর্তমান আন্তর্জাতিক আইনের সীমাবদ্ধতা ঊল্লেখ করা উচিত নয়, বরং সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা…দুর্ভাগ্যবশত আন্তর্জাতিক আইনের বিদ্যমান ত্রুটিগুলো শুধরে দেবে। ”

আদালতের প্রেসিডেন্ট পোল্যান্ডের পিয়োতর হফমানস্কি আইসিসি ভবনের বাইরে জেলেন্সকিকে স্বাগত জানান। জেলেন্সকিকে দেখতে আদালতের কর্মীরা জানালায় ভিড় জমান এবং ভবনের বাইরে আদালতের নিজস্ব পতাকার পাশে ইউক্রেনের পতাকা উত্তোলন করেন।

১৮ মার্চে এক বিবৃতিতে আইসিসি জানায়, পুতিন ”ইউক্রেনের দখল করা এলাকা থেকে রাশিয়ান ফেডারেশনে [শিশুদের] বেআইনিভাবে নির্বাসন ও [শিশুদের] বেআইনিভাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে করা যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী।”

তবে, দ্য হেইগ-এ পুতিনকে বিচারের সামনে দাঁড় করানোর সম্ভাবনা খুবই কম। পরোয়ানা বাস্তবায়নের জন্য আদালতের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী নেই। আইসিসির ১২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের কোনোটিতে রাশিয়ার নেতার সফর করারও সম্ভাবনা নেই। সদস্য রাষ্ট্রগুলো যদি পারে, তবে তাকে গ্রেফতার করতে দায়বদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া কেউই আদালতের কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় না।

ক্রেমলিনে ড্রোন হামলার মাধ্যমে পুতিনকে হত্যার চেষ্টার জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনী দায়ী বলে রুশ সরকার যে অভিযোগ করেছে, তা অস্বীকার করার একদিন পর জেলেন্সকি এই বক্তব্য দিলেন। মস্কো এই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী কর্ম’ আখ্যা দিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

পুতিনের মুখপাত্র দ্যমিত্রি পেসকভ, এই কথিত হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছেন।তিনি বলেন, রাশিয়া ভালাভাবেই জানে যে এমন পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত এবং এই সন্ত্রাসী হামলা কিয়েভ করেনি; এই হামলা করেছে ওয়াশিংটন।

নিজের দাবি পক্ষে কোনো প্রমাণ না দিয়েই পেসকভ বলেন,”এবং কিয়েভকে যা বলা হয়, তারা তাই করে।”

ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কার্বি রাশিয়ার এই অভিযোগকে নাকচ করে দিয়েছেন। এমএসএনবিসিকে তিনি বলেছেন,”আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি যে, এখানে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ভাবে জড়িত নয়… এ বিষয়ে আমাদের কিছুই করার ছিলো না। পেসকভ নির্জলা মিথ্যা বলছেন।”

এই হামলা মস্কোর সাজানো কিনা এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও সংশয় প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার বলেন,”ক্রেমলিন থেকে আসা যে কোনো কিছুকেই আমি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখি।”

যুদ্ধক্ষেত্রে, ইউক্রেনের সেনারা দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার ভারে রাশিয়ার যে ড্রোন দক্ষিণ অঞলের ওডেশা শহরে আক্রমণ করেছে তাতে ‘মস্কোর জন্য’ ও ‘ক্রেমলিনের জন্য’ লেখা ছিলো। এ থেকে আন্দাজ করা যায় যে, এই ড্রোন হামলা ছিলো সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিশোধমূযলক। এ ছাড়া, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভেও চারদিনে তৃতীয়বারের মতো বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ বাহিনী ২৪টি ইরান-নির্মিত ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ১৮টিকেই তারা ধংস করেছে। এ হমালায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।