বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত করার আহ্বান জানালো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন শেষে কয়েকজন রোহিঙ্গা মুসলমান শরণার্থী ও বাংলাদেশি কর্মকর্তা নৌকায় করে টেকনাফে ফিরছেন। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা-প্রত্যাবাসনকে উৎসাহ দিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়; ৫ মে ২০২৩।

বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ১০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডব্লিউ বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এখনো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবাসনের উপযোগী নয়।

এইচআরডব্লিউ-এর ১৮ মে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে (রোহিঙ্গা) সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বা তাদের জীবন ও স্বাধীনতার প্রতি মারাত্মক ঝুঁকিগুলোকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত দাতা সরকার ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের উচিৎ এ ধরনের যেকোনো উদ্যোগ স্থগিত করার আহ্বান জানানো।”

মিয়ানমারে নির্যাতন ও সহিংসতা এড়াতে, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা কয়েক দশক ধরে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। সেখানে বর্তমানে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা, ঘন বসতির, দীনহীন দশার শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছে।

রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর সহিংস নিপীড়ন শুরু হলে, ২০১৭ সালে পর প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। পরে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে সম্মত হয়।

রোহিঙ্গারা অস্বীকৃতি জানালে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে শরণার্থী প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। রোহিঙ্গারা জানায়, তারা রাখাইনে বসবাস করতে এখানো নিরাপদ বোধ করেন না; এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকারসহ অন্যান্য দাবি মেনে নেয়নি।

বর্তমানে, চীনের পৃষ্ঠপোষকতায় নেয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ আবার একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আ্ওতায় ১ হাজার ১০০ রোহিঙ্গাকে জুন-জুলাই মাসে শুরু হতে যাওয়া বর্ষা মৌসুমের আগে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করছে।

এইচআরডব্লিউ’র বিবৃতিতে সংস্থাটির এশিয়া বিষয়ক গবেষক শায়না বখনার জানান, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের “ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়, কেনো শুরুতে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়েছিলেন এবং (তাদের) স্বীকার করা উচিৎ, সেই সব বিষয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি।”

তিনি লিখেন, “বাংলাদেশ আশ্রয়দাতা হিসেবে এই বোঝার ভারে হতাশাগ্রস্থ। শরণার্থীদের নির্দয় মিয়ানমার জান্তার নিয়ন্ত্রণে ফেরত পাঠালে, আবারো একই ধরনের ভয়াবহ দেশত্যাগের পুনরাবৃত্তির ভিত্তি তৈরি হবে।”