বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই হবে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন তাঁর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে এবং তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সরকারের অধীনে অবশ্যই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে”।

বুধবার (২৪ মে) কাতারের রাজধানী দোহার র‌্যাফেলস হোটেলে কাতার ইকোনমিক ফোরামে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

কাতার ইকোনমিক ফোরামের এডিটর-অ্যাট-লার্জ হাসলিন্দা আমিন সেশনে অ্যাঙ্কর করেন।

বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করার জন্য তাঁর সরকারকে পদত্যাগ করাতে রাজপথে আন্দোলনের নতুন প্রচারণা শুরু করার সময় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য এসেছে।

বাংলাদেশে চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর সামরিক স্বৈরশাসকেরা সব নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, তখন নির্বাচন ছিল একটি খেলা।

শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ যখন তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল তখন তিনি দেশে ফিরতে পেরেছেন।

তিনি আরও বলেন, তারপর থেকে আমরা গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম শুরু করি। আমাদের সংগ্রাম ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং আমরা আমাদের প্রত্যেকটি মেয়াদে নির্বাচনে তা করেছি।

বিরোধী দল বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে কোনো সংগঠন এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। তাহলে তখন কী ফল হয়েছিল? যে দলটি (বিএনপি) এখন প্রশ্ন তুলছে তারা সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছে।

দৃঢ়কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তিনি এখানে এসেছেন, কারণ জনগণই ঠিক করবে কে দেশ চালাবে।

তিনি বলেন, এটা জনগণের ক্ষমতা, আমি জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চাই। আমি এখানে ক্ষমতা দখল করতে আসি নাই। বরং আমি আমাদের জনগণকে ক্ষমতায়িত করতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (জনগণের) সরকার বেছে নেওয়ার অধিকার থাকতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, এখন কিছু দল বলছে তারা অংশ নেবে না। তারা কীভাবে অংশগ্রহণ করবে? কারণ তাদের আমলে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের মানুষ কষ্ট পেয়েছে। তাদের সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। সর্বত্রই ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও শোষণ।

তিনি আরও বলেন, তারা কখনো জনগণের কথা ভাবেনি। আমার দেশের জনগণের প্রতিদিন একবেলা খাবার পাওয়াই খুব কঠিন ছিল। এমন ছিল পরিস্থিতি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না—মির্জা ফখরুল

এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবারও বলেছেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে (বাংলাদেশে) কোনো নির্বাচন হবে না।

২০ মে (শনিবার) বিকেলে লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠে দলটির জেলা শাখা আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা বলেছি, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। এ জন্য শেখ হাসিনা সরকারকে আগে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। (সরকার) নতুন আইন করেছে, নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন বাতিল করতে পারবে না। এমন বানানো নির্বাচন কমিশন আমরা চাই না।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “যারা আমাদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার সময় নেই। তাদেরকে বিতাড়িত করার সময় এসেছে। ‘কোনঠে বাহে জাগো সবাই’, দাবি একটাই, শেখ হাসিনার পদত্যাগ”।

সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।