ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার তাহাব এলাকায় ফারুক আহমেদ গনির এক হেক্টর জমি সামনে অর্কিড এবং পেছনে ধানক্ষেত।
পাঁচ বছর আগেও এখানে একটি সমৃদ্ধ আপেল বাগান ছিল। তবে এক দশক ধরে আপেলের দাম কমতে থাকায় ৭০ বছর বয়সী ফারুক একে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন।
ফারুক এই জমিটিকে রূপান্তর করে নতুন এক ধরনের চাষাবাদ প্রক্রিয়ার প্রচলন করেছেন, যেটি কাশ্মীরের ভারত অংশে একেবারেই নতুন। একে ‘এক্সোটিক ফার্মিং’ বলা হচ্ছে, যা মূলত স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত হয় না বা প্রথাগত নয় এমন উদ্ভিদের চাষ।
ফারুক জানান, তার খামারে পার্সলি, ব্রকলি, লেটুস, পুদিনা, সেলেরি, লাল ফুলকপি ও হলুদ রঙের জুকিনি সহ আরও অনেক ধরনের বিদেশি সবজির চাষ হয়। তিনি বলেন, সতর্কতার সঙ্গে যেসব সবজি উৎপাদন করেন, সেগুলোকে কাশ্মীর উপত্যকার একাধিক খুচরো ও পাইকারি সবজি বিক্রেতার কাছে সরবরাহ করেন।
তিনি বলেন, “কাশ্মীরে এসব সবজির উচ্চ চাহিদা রয়েছে। আমি উৎপাদন করে খুব দ্রুত এগুলো বিক্রি করি।”
ফারুক জানান, অতীতে মানুষ বাজার থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে এসব সবজি কিনতেন, কারণ সেগুলো কাশ্মিরের বাইরে থেকে আমদানি করা হত। এখন যেহেতু স্থানীয়ভাবে এগুলোর উৎপাদন হচ্ছে, তাই মানুষের কাছে স্থানীয় নয় এমন সবজিও সহজলভ্য হয়েছে।
সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মেহরাজ আহমাদ দার (৩২) ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, এক্সোটিক কৃষিকাজ তার মতো বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
মেহরাজ বলেন, “আমি কোনো সরকারি বা বেসরকারি চাকরি পাচ্ছিলাম না। সৌভাগ্যজনক ভাবে, ফারুকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি তার খামারে কাজ করার জন্য লোক খুঁজছিলেন। এ মুহূর্তে তার খামারে একসঙ্গে ৬ জন কাজ করছেন।” তিনি উল্লেখ করেন, কর্মীদের প্রত্যেকেই মাসে ৩৫০ ডলার করে উপার্জন করছেন।
মেহরাজের মতে, এক্সোটিক কৃষিকাজ প্রথাগত কৃষিকাজের চেয়ে ভিন্ন, কারণ এতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ, যেমন গ্রীনহাউজ বা নেট-হাউজে স্থানীয় নয় এমন উদ্ভিদের চাষ করা হয়।
মোহাম্মদ রফিক (৬০) তাহাবে তার আপেল বাগানটিকে এক্সোটিক খামারে রূপান্তরিত করেছেন। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, মূলত ২টি কারণে তিনি বড় আকারে প্রথাগত শস্যের উৎপাদন না করে এক্সোটিক কৃষিকাজ করার সিদ্ধান্ত নেন--পর্যটকরা সেসব সবজি বেশি পছন্দ করেন যেগুলোর সঙ্গে তারা পরিচিত এবং আপেল এখন আর আগের মতো লাভজনক নয়।
পুলওয়ামা জেলার কৃষি কর্মকর্তা শাহনাওয়াজ আহমাদ শাহ ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, সরকার জম্মু ও কাশ্মিরে এক্সোটিক কৃষিকাজকে জনপ্রিয় করে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।