আফগানিস্তানের তালিবান প্রশাসন এক মাসের মধ্যে নারীদের দ্বারা পরিচালিত শত শত রূপচর্চাকেন্দ্র (বিউটি পার্লার) বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।এই দারিদ্র্য পীড়িত দেশে নারীদের কাজ করা ও জনসম্মুখে আসা বন্ধের তালিবানের ধারাবাহিক উদ্যোগের সর্বসাম্প্রতিক সংযোজন এই নির্দেশনা।
তালিবানের অনৈতিক কাজ প্রতিরোধ ও পূণ্যকর্ম প্রচার বিষয়ক মন্ত্রক, রাজধানী কাবুল ও প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে এবং সব সেলুনের নিবন্ধন বাতিল করতে নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রক জানিয়েছে, এই নির্দেশনা এসেছে তালিবানের নিভৃতচারী সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার দেয়া এক মৌখিক আদেশ(ফতোয়া)থেকে।
নীতি ও নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রকের মুখপাত্র মঙ্গলবার এই নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি আর কোনো তথ্য দেননি।
সাংবাদিকদের দেয়া এক সংক্ষিপ্ত এসএমএস বার্তায় মোহাম্মাদ সাদিক আকিফ জানান,“এক মাসের মধ্যে নারীদের বিউটি পার্লার বন্ধ করতে হবে।” মন্ত্রক এই নির্দেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে, তবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
বিউটি সেলুনে কাজ করেন এমন মেকআপ শিল্পীরা জানান, সর্বসাম্প্রতিক এই নিষেধাজ্ঞায় হাজারো নারী কর্মহীন হয়ে পড়বেন। যার ফলে, আফগানিস্তানের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে তাদের পরিবারের টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়বে; কারণ পরিবারের পুরুষ সদস্যদের জন্য কোনো চাকরি নেই।
রায়হান মুবারিজ নামের এক নারী মেকআপ শিল্পী আফগানিস্তানের সংবাদ মাধ্যম টোলো নিউজ চ্যানেলকে বলেন, “বেকারত্বের কারণে যখন পুরুষরা তাদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারেন না, তখন নারীরা জীবিকা অর্জনের জন্য বিউটি সেলুনে কাজ করতে বাধ্য হন।” তিনি জানতে চান,“এখন যদি পার্লার বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে আমরা কী করবো।"
কাবুলের এক বিউটি সেলুনে কর্মরত অপর এক নারী জানতে চান, “যদি বাড়ির পুরুষদের কাজ থাকে, তাহলে আমাদের বাসা থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তারা কি চান আমরা না খেয়ে মারা যাই?”
জাতিসংঘ, তালিবান-এর প্রতি বিউটি সেলুন বন্ধ করার নির্দেশ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
কাবুলে অবস্থিত জাতিসংঘের কার্যালয় টুইটারে জানায়, “নারীদের অধিকারের ওপর নতুন আরোপিত এই বিধিনিষেধ, অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।আর, এই বিধি নিষেধ, নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি সমর্থন জানানোর অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সার্বিকভাবে আফগান নারীদের স্বাধীন জীবনযাপন ও শিক্ষার বিরুদ্ধে আরোপিত সব ধরনের বিধিনিষেধ বন্ধের দাবি জানিয়েছে। সতর্কবাণী দিয়েছে, প্রচলিত নীতিমালা তালিবান সরকারকে সারা বিশ্বে বৈধতা দেয়ার বিষয়টিকে “প্রায় অসম্ভব” করে তুলেছে।
আখুন্দজাদা নারীদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ শিথিলের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তার সরকার আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক শরিয়া আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করছে।
প্রায় ২০ বছর আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পর যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো মিত্ররা তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করে নিলে, তালিবান একটি প্রাণঘাতী বিদ্রোহ শুরু করে এবং ২০২১ এর আগস্টে দেশটির ক্ষমতা দখল করে নেয়।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক সপ্তাহ পর, যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিদেশী সেনারা আফগানিস্তানে হামলা চালায়। আর, ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচিত আল-কায়েদা সংগঠনের নেতাদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে তৎকালীন তালিবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।