তেহরানে পুলিশের কথিত মারধরে নিহত তরুণীকে সমাহিত করল পরিবার

ফাইল ছবি—ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচারিত নজরদারি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ১৬ বছর বয়সী আরমিতা গেরাভান্ডকে একটি ট্রেনের বগি থেকে অন্য নারীরা টেনে বের করে আনছেন (১ অক্টোবর, ২০২৩)

অভিযোগ এসেছে, হিজাব আইন মেনে না চলার কারণে ইরানের এক তরুণীকে মারধর করেছে পুলিশ। ভয়েস অফ আমেরিকা জানতে পেরেছে, এই ঘটনার পরিণামে তরুণীর মৃত্যু হয়। রবিবার কড়া নিরাপত্তার মাঝে তেহরানের বেহেশত-এ-জাহরা কবরস্থানে তার শেষকৃত্য হয়েছে।

নরওয়ে ভিত্তিক ইরানের মানবাধিকার সংস্থা হেঙ্গাও রাইটস গ্রুপ শনিবার দিনের শেষে এ ঘটনার কথা প্রথম প্রকাশ করে। ১৭ বছর বয়সী নিহত আরমিতা গেরাভান্ডের পরিবারের সদস্যরা বলছে, কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আরমিতার দেহাবশেষ তাদের আদি বাসস্থান কেরমানশাহ শহরে সমাহিত করতে নিষেধ করেছে। শহরটি ইরানের পশ্চিমে কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে অবস্থিত।

ইরানের বড় বড় অনেক শহরের মতো কেরমানশাহতেও গত এক বছরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বেড়েছে। মূলত ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনীর মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় এসব বিক্ষোভের উৎপত্তি হয়। মাহসার মৃত্যুর ১ বছর পার হতে না হতেই অপর নারী গেরাভান্ড মারা গেলেন। মাহসার মৃত্যুতে রাষ্ট্রের বাধ্যতামূলক ইসলামিক পোশাক নীতিকে ঘিরে বেশ কয়েক মাস ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, যেটি পরবর্তীতে ইরান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিরোধিতায় রূপান্তরিত হয়।

গেরাভান্ডের শেষকৃত্যকে ঘিরে কড়া রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের ঘটনা এটাই ইঙ্গিত করছে যে তেহরানের কর্মকর্তারা চিন্তিত ছিলেন যে তরুণীর মৃত্যুর জেরে আবারো দেশটিতে নতুন করে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠতে পারে।

অভিযোগ মতে, ১ অক্টোবর দক্ষিণ তেহরানের মেট্রো স্টেশন মেয়দান-ই শোহাদায় একটি সাবওয়ে রেলগাড়িতে প্রবেশের সময় ইরানের হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তারা গেরাভান্ডকে মারধর করেন, যার ফলে তিনি প্রাণ হারান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান বলেন, “জনসম্মুখে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে মারধরের শিকার হয়ে আরমিতা গেরাভান্ডের মৃত্যুর ঘটনা জেনে আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। ইরানের রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের নিজেদের মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টি নিন্দনীয় ও এই শাসকগোষ্ঠীর ভঙ্গুরতার পরিচায়ক।”

১ অক্টোবর কমায় চলে যাওয়ার পর গত সপ্তাহে গেরাভান্ডকে কার্যত মৃত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে ইরানের কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছেন যে পুলিশের কার্যক্রমের কারণে তিনি আহত হয়েছেন।

আইআরএনএ জানিয়েছে, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার মস্তিষ্কে আঘাত লাগায় তিনি কমায় চলে যান।”

শনিবার আইআরএনএ জানিয়েছে, ডাক্তাররা তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে “হঠাৎ রক্তচাপ পড়ে যাওয়াকে” কে চিহ্নিত করেছে।

মূল প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ভয়েস অফ আমেরিকার ফার্সী সার্ভিস। এপি ও রয়টার্স থেকে কিছু তথ্য নেওয়া হয়েছে।