গাজায় আড়াই হাজারের বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে, বলছে ইসরাইল

গাজা ভূখণ্ডের কেন্দ্রে দেইর বালাহ এলাকার আল-মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমানহামলায় ধ্বংসের পরিমাণ দেখছেন ফিলিস্তিনিরা (৫ নভেম্বর, ২০২৩)

রবিবার ইসরাইল বলছে, তারা ৭ অক্টোবর হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে “আড়াই হাজারেরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে”।

ইসরাইল বলছে, এই লক্ষ্যবস্তুগুলোতে ইসরাইলের স্থল, বিমান ও নৌবাহিনীর “সমন্বিত কার্যক্রমের” মাধ্যমে আঘাত হানা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে ইসরাইল সেনাবাহিনীর চ্যানেলে পোস্ট করা বিবৃতিতে বলা হয়, “রাতভর আইডিএফের (ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) সেনারা যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে হামাসের সামরিক কমপাউন্ডে হামলা চালায়, যার মধ্যে আছে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা কেন্দ্র, পর্যবেক্ষণ চৌকি ও হামাসের ব্যবহৃত বাড়তি অবকাঠামো।”

অতর্কিত হামলায় ইসরাইলের ১ হাজার ৪০০ জনের চেয়েও বেশি নাগরিককে হত্যা ও ২০০ জনের বেশি নাগরিককে জিম্মি করার পর হামাসের বিরুদ্ধে পালটা হামলার অভিযান শুরু করে ইসরাইল।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনি এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রবিবার গাজা ভূখণ্ডের কেন্দ্রে দুইটি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইল বোমাবর্ষণ করলে অন্তত ৫৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং অনেকে আহত হন। রয়টার্স নিরপেক্ষভাবে ওয়াফা-র এই প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। এ বিষয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর কাছে মন্তব্য চাওয়া হলেও তারা তাৎক্ষনিকভাবে সাড়া দেয়নি।

এ ধরনের হামলায় উত্তর গাজার মহল্লাগুলোতে বড় অংশ জুড়ে সব অবকাঠামো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। জাতিসংঘের অবকাঠামোগুলোতে এ অঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছে। এরকম এক অবকাঠামো শনিবার আক্রান্ত হয়। এতে ১৫ জন নিহত হন ও আরও কয়েক ডজন মানুষ আহত হন।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক জুলিয়েট তুমা রয়টার্সকে বলেন, জাবালিয়া জেলার আল-ফাখৌরা স্কুলে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। সে সময় এই স্কুলের ওপর হামলা হয়।

রয়টার্স একটি ভিডিও সংগ্রহ করেছে, যেখানে এক তরুণ বালক বলছে, “আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেখানে ৩ বার বোমাবর্ষণ হল। আমি আমার নিজের হাতে একটি অক্ষত ও অপর একটি মস্তকহীন মরদেহ বহন করে আনলাম”। ভিডিওতে বালকটি দুঃখ-হতাশায় কাঁদছিল। “সৃষ্টিকর্তা আমার পক্ষ থেকে প্রতিশোধ নেবে”, বলে সে।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২৩১ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। যার ফলে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে অন্তত ৯ হাজার ৪৮৮ হয়েছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিয় গুত্তেরেস ২৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গাজাতে ইসরাইলের অবরোধ 'আন্তর্জাতিক মানবতা আইনের স্পষ্ট লংঘন'।

হামাসের সশস্ত্র বাহিনী শনিবার বলছে, গাজায় সর্বশেষ ইসরাইলি বিমানহামলার পর ৬০ জন জিম্মি নিখোঁজ আছেন।

ইজ আদ-দিন আল কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা হামাসের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানান, ৬০ নিখোঁজ ইসরাইলি জিম্মির মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ ভাঙা পাথরের স্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।

এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য রয়টার্স, এপি ও এএফপি থেকে নেওয়া হয়েছে।