গাজায় আক্রমণ কমিয়ে আনতে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

গাজা ভূখন্ডের রাফাহতে একটি আবাসিক ভবনে ইসরাইলি হামলার পর একজন ফিলিস্তিনির প্রতিক্রিয়া । ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩।

গাজায় ব্যাপক বোমা বর্ষণ ও স্থল অভিযানের পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট ভাবে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে অভিযান চালাতে ওয়াশিংটন ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন।

ইসরাইলে সফরের সময়ে তিনি সংবাদদাতাদের বলেন, “এই যুদ্ধের আরেকটি পর্ব আসবে যেখানে নেতৃত্বকে লক্ষ করে গোয়েন্দা পরিচালিত অভিযান চালানো হবে।”

সালিভান বলেন , “ ঠিক কখন এবং কোন পরিস্থিতে সেটা করা হবে সে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে নিবিড় আলোচনা চলবে। সেই পরিস্থিতি এবং এর সময় নিয়ে আমি” ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতেনিয়াহুর, ইসরাইলি সরকারের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে আমার আলোচনা করেছি।

একই সময়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায় তারা গাজা ভূখন্ডে তাদের স্থল অভিযানের সময়ে ভুলবশত তিনি জন ইসরাইলি পণবন্দিকে হত্যা করেছে। ইসরাইলি সেনার প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন ইসরাইলি সৈন্যরা শুক্রবার এই জিম্মিদের দেখতে পায় এবং ভুলবশত তাদেরকে হুমকি বলে মনে করে। তিনি বলেন সেনাবাহিনী গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা প্রধান ইয়োভ গ্যালান্ট সেখানে সফররত হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভানকে বলেছেন, গাজা ভূখণ্ডে হামাস জঙ্গিদের পরাস্ত করতে ইসরাইলি বাহিনীর কয়েক মাস সময় লাগবে।

গ্যালান্ট বলেন, হামাস এক দশকের বেশি সময় ধরে গাজায় “ভূ-অভ্যন্তরে এবং মাটির ওপরে” তাদের অবকাঠামো নির্মাণ করে চলেছে । তিনি বলেন, ইসলামপন্থী এ গোষ্ঠীকে ধ্বংস করতে “দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। এই যুদ্ধ কয়েক মাসের চেয়েও বেশি সময় ধরে চলবে।”

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে । ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

গ্যালান্ট বলেন, “কিন্তু আমরা জিতবো এবং আমরা তাদের ধ্বংস করবো।”

গ্যালান্টের সাথে সালিভানের আলোচনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এখন তৃতীয় মাসে। গ্যালান্টের দফতর বলেছে, দুই কর্মকর্তা লেবাননের সাথে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর যুদ্ধের কারণে কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পরে উত্তরে লেবাননের সীমান্তের কাছে ইসরাইলিদের নিজ বাড়ি ফেরার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা করেছেন।

সালিভানের সফরের আগে ইসরাইলি বাহিনী বৃহস্পতিবার গাজা ভূখণ্ডে আরও বিমান হামলা চালায়।

এদিকে বৃহস্পতিবার ইসরাইলের সেনারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে অভিযান চালায়। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছেন, এতে ১২ জন নিহত হয়েছে এবং ইসরাইলের সরকার বলেছে, কয়েক ডজন জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে।

ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স জানায়, খলিল সুলেমান হাসপাতালের কম্পাউন্ডে ইসরাইলি সেনাদের হাতে নিহতদের মধ্যে একজন নিরস্ত্র কিশোরও ছিল। হাসপাতালটি জেনিনের শরণার্থী শিবিরের বাইরে অবস্থিত।

ফিলিস্তিন সরকার জেনিনে অভিযানকে “বিপজ্জনক বৃদ্ধি” বলে নিন্দা জানিয়েছে। সরকার আরও বলেছে, কিছু ইসরাইলি সৈন্য দ্বারা একটি মসজিদের অবমাননা ধর্মীয় দ্বন্দ্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ইসরাইল বলেছে, তারা সেনাদের কঠোর ভাবে তিরস্কার করবে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান বৃদ্ধি করছে। সেনাবাহিনী বলেছে, তারা বৃহস্পতিবারের অভিযানে “১০ জনের বেশি” মানুষকে হত্যা করেছে, যাদেরকে তারা সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেছে। তারপর ওই অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে।