এই সপ্তাহে তুরস্কের একমাত্র আসিরীয় আইনপ্রণেতা তার মাতৃভাষা সিরিয়াক-এ বড়দিনের বার্তা প্রদান করেছেন। এ নিয়ে দেশটির পার্লামেন্ট বিতর্কে ফেটে পড়ে। অন্যান্য আইনপ্রণেতারা এতে অপমান বোধ করেন। তারা মনে করেন জাতীয় সংসদে শুধুমাত্র তুর্কি ভাষায় কথা বলা উচিত।
সোমবার বাজেট বিতর্কের সময় কুর্দিপন্থী পিপলস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি পার্টির (ডিইএম) সদস্য জর্জ আসলান বলেন, “তুরস্কে বসবাসরত আমাদের গ্রীক, আর্মেনীয় এবং আসিরীয় নাগরিক থেকে শুরু করে সকল খ্রিস্টানকে আমি বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাই।নতুন বছর আমাদের দেশে এবং সমগ্র বিশ্বে প্রেম ও শান্তি বয়ে আনুক এই কামনা করি।”
আসলান আরও বলেন, “যারা তুর্কি ভাষা জানে না এমন আসিরীয় মানুষদের জন্য আমি সিরিয়াক ভাষায় বড়দিনের একই বার্তা দিতে চাই।” তিনি সিরিয়াক ভাষায় তার বক্তব্য চালিয়ে যান।
.
জাতীয়তাবাদী, মধ্য-ডান গুড পার্টির (আইওয়াইআই পার্টি) বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা আসলানের পোডিয়াম থেকে তুর্কি ছাড়া অন্য ভাষায় বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
আসিরীয়রা মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিস্টান সংখ্যালঘু। তুরস্ক, সিরিয়া এবং ইরাকে যেখানে তারা বাস করে সেখানে তাদের জনসংখ্যা কমছে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া থেকে তাদের ইতিহাস শুরু। সিরিয়াক ভাষা একটি সেমেটিক ভাষা। এটি আরবি ভাষা থেকে স্বতন্ত্র।
তুরস্কের ফেডারেশন অফ সিরিয়াক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ইভগিন তুর্কারের মতে, তুর্কি প্রজাতন্ত্রের শততম বার্ষিকীতেও কিছু মানুষের অন্যান্য ভাষার প্রতি সহনশীলতা তৈরি হয়নি।
তুর্কার আরও বলেন, “ভাষা নির্বিশেষে প্রত্যেকের যার যার মাতৃভাষায় নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত এবং নিজের ভাষায় পড়াশোনা করার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত।”
আসলানের সিরিয়াক ভাষার বক্তব্য সংসদীয় সংলাপে উহ্য শব্দ হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পাদটীকায় বলা হয়েছে, “এই অংশে বক্তা অ-তুর্কি শব্দ ব্যবহার করেছিলেন।”
এটি পার্লামেন্টের সংলাপের প্রতিলিপিকারদের একটি নিয়মিত অনুশীলন।তারা কুর্দি, ইংরেজি ও ফরাসিসহ প্রতিটি অ-তুর্কি ভাষায় একই নিয়ম প্রয়োগ করে।
১৯৮০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের সময় থেকে ১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত কুর্দি ভাষা তুরস্কে নিষিদ্ধ ছিল।
কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে তুরস্কের শান্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন কুর্দি ভাষার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তুলনামূলকভাবে শিথিল করা হয়েছিল। ওই শান্তি প্রক্রিয়ায় কুর্দি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাদানসহ অনেক বিষয়ে বিতর্ক হয়েছিল।