পাকিস্তান: অনেক তরুণ মনে করে নির্বাচন হবে স্বচ্ছ এবং সেনাবাহিনী সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান, বলছে সমীক্ষা

পাকিস্তানে নির্বাচনের আগে বালুচিস্তানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল। ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪।

পাকিস্তানে আসন্ন নির্বাচনের আগে তরুণদের ওপর চালানো ভয়েস অফ আমেরিকার এক সমীক্ষায় উঠে আসা প্রধান কিছু তথ্যঃ

তরুণ ভোটারদের বেশিরভাগ ভোট দিতে আগ্রহী।

বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, এই নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ।

তরুণদের কাছে সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান।

নির্বাচন কমিশনের প্রতি ন্যূনতম আস্থা প্রকাশ করা হয়েছে।

মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে বড় ইস্যু যেটা মাথায় রেখে তরুণরা ভোট দিতে চলেছে।

তরুণদের প্রায় অর্ধেক মনে করে যে, নির্বাচনের ফলাফল তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করবে না।

পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণই আফগান উদ্বাস্তুদের বহিষ্কারকে সমর্থন করে।

বেশিরভাগ তরুণ ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক চায়।

তরুণদের একটি অংশের বিশ্বাস, এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ৫৮.৬ মিলিয়নের বেশি তরুণ ভোট দেওয়ার যোগ্য। এই সংখ্যাটা পাকিস্তানের মোট ভোটারের প্রায় ৪৪ শতাংশ। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তরুণদের মনোভাব কী এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপর তাদের আস্থা কতখানি তা বুঝতে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক পোলিং সংস্থা আইপিএসওএস ভয়েস অফ আমেরিকার জন্য সমীক্ষাটি চালিয়েছিল। এই সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল সমস্ত লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানুষ এবং পাকিস্তানের সব প্রদেশ ও ফেডারেল রাজধানীর নগর ও গ্রামাঞ্চলকে।

নির্বাচনের স্বচ্ছতা

পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচন স্বচ্ছ হবে কিনা তার উত্তরে এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৬৫ শতাংশ তরুণ রায় দিয়েছে যে তাদের আশা এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে। তবে, এই মতের বিরোধিতা করেছে ২০ শতাংশ তরুণ এবং ১৫ শতাংশ কোনও মত দেয়নি।

নির্বাচনে প্রভাব

এই নির্বাচনে কোন প্রতিষ্ঠান প্রভাব ফেলতে পারে এই প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ তরুণ (৬৮ শতাংশ) মনে করছে যে, পাকিস্তানের কোনও প্রতিষ্ঠানই সাধারণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারবে না। তবে, ৩২ শতাংশ তরুণ মনে করে যে নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে।

এই তরুণদের মতে, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে সক্ষম এমন প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সেনা বাহিনী (৬৮ শতাংশ), তারপর নির্বাচন কমিশন (৫০ শতাংশ), রাজনৈতিক দল (৪৪ শতাংশ), মিডিয়া সংস্থা (৩৬ শতাংশ), বিচার বিভাগ (৩৫ শতাংশ) ও বিদেশী সংগঠন (২২ শতাংশ)।

পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচনকে কোন দেশ প্রভাবিত করতে পারে? এর জবাবে ২৭ শতাংশ তরুণ মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পরে রয়েছে ভারত (৭ শতাংশ), চীন (৪ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (২ শতাংশ) ও রাশিয়া (২ শতাংশ)।

জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে কার প্রতি তাদের আস্থা বেশি, এর উত্তরে অধিকাংশ তরুণ (৭৪ শতাংশ) জানিয়েছে, তারা সেনা বাহিনীর উপর আস্থাশীল। সবচেয়ে কম আস্থা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের উপর (৪২ শতাংশ)। সুপ্রিম কোর্টের উপর এই তরুণদের ৫৮ শতাংশের আস্থা রয়েছে, এরপর যথাক্রমে মিডিয়া (৫৪ শতাংশ), রাজনৈতিক দল (৫০ শতাংশ), পার্লামেন্ট (৪৭ শতাংশ), ফেডারেল সরকার (৪৭ শতাংশ)।

ভোটে অংশগ্রহণ

পাকিস্তানের তরুণরা কি ভোট দিতে যাবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে ৭০ শতাংশ জানিয়েছে যে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তারা ভোট দেবে। এদের অধিকাংশই (৭৮ শতাংশ) ২০১৮ সালে যে-রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়েছিল তাকেই আবার ভোট দিতে ইচ্ছুক। প্রতি পাঁচজনে মাত্র একজন (২২ শতাংশ) এবার অন্য দলকে ভোট দিয়ে দেখতে চায়। এদিকে, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী তরুণদের প্রায় ১৭ শতাংশ জানিয়েছে, তারা কখনই ভোট দিতে চায় না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই তরুণদের ৬৪ শতাংশ ২০১৮ সালে ভোট দিয়েছিল।

এই ভোটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যর প্রশ্নে দেখা যায়, তরুণ ভোটারদের (৮১ শতাংশ) কাছে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। এই বিষয়কে মাথায় রেখেই তারা ভোট দেবে বলে জানিয়েছে। বড় সংখ্যক তরুণদের কাছে ধর্মীয় স্বাধীনতা (৭৯ শতাংশ) ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা (৭৮ শতাংশ) একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

বৈদেশিক সম্পর্ক নিয়ে তরুণ ভোটাররা কী ভাবছে? সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, তরুণদের ৬৯ শতাংশ ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক চায়। আফগান উদ্বাস্তুদের বহিষ্কার করতে পাকিস্তানি সরকারের সাম্প্রতিক নীতিকে বড় সংখ্যক তরুণ (৬৬ শতাংশ) সমর্থন করেছে।

প্রতি চারজন পাকিস্তানি তরুণের মধ্যে তিনজন (৭৬ শতাংশ) বলছে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) পাকিস্তানের জন্য মূল্যবান প্রকল্প। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, পাকিস্তানের চারটি প্রদেশেই সিপিইসি সমানভাবে জনপ্রিয়।

রাজনীতিতে আগ্রহ

বর্তমান সমীক্ষার ফলাফল বলছে, পাকিস্তানি তরুণদের অর্ধেকের বেশি রাজনীতিতে আগ্রহী। এদের প্রায় ৩০ শতাংশ জানিয়েছে, তারা সক্রিয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। এদিকে, প্রতি পাঁচজন তরুণের মধ্যে তিনজন (৬০ শতাংশ) বিশ্বাস করে যে, রাজনৈতিক নেতারা তাদের ইস্যুগুলি বোঝেন না। মূলত গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী নারী ও তরুণদের মধ্যে এই মতামত বেশি প্রবল।

তবে, এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী তরুণদের ৪০ শতাংশ মনে করে যে, রাজনৈতিক নেতারা তাদের সমস্যাগুলি বোঝেন।