গাজা ইসরাইলঃ যুদ্ধবিরতির ডাকের মাঝে ভূখণ্ড জুড়ে ইসরাইলি হামলা

ছবিতে গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলো দেখা যাচ্ছে। (৬ মার্চ, ২০২৪)

কয়েক সপ্তাহের জন্য সংঘাত থামিয়ে রাখার একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে মিশরের আলোচকদের চেষ্টার মাঝেই, ইসরাইলের সামরিক বাহিনী, বুধবার গাজা ভূখণ্ড জুড়ে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়েছে।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, বেইত হানুন এলাকায় বিমান হামলায় দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। এরা দুইজনই ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলায় জড়িত ছিল বলে জানায় তারা। এছাড়াও মধ্য গাজা এবং গাজার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনিসে ইসরাইল হামলা চালায়।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, তিনি গাজার “ভয়াবহ দুর্ভোগ” মোকাবেলায় সেখানে আরও মানবিক ত্রাণ প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুধবার ইসরাইলকে একটি সতর্কতা জারি করার পরিকল্পনা করেছেন।

ক্যামেরন মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বলেন, "মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে; প্রতিরোধযোগ্য রোগে মানুষ মারা যাচ্ছে।”

তিনি জানান, সফরকালে ইসরাইলের যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্টজের সঙ্গে বুধবার বৈঠকে তিনি বিষয়টি উত্থাপন করবেন।

মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চলবে। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা বুধবার কায়রোতে আবারও বৈঠকে বসছেন, যা ১০ মার্চ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার বলেছেন, নতুন করে যুদ্ধবিরতি হবে কিনা তা এখন হামাসের হাতে।

তবে একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই অঞ্চলে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় আরও মানবিক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসরাইলের “কোনো অজুহাতই” নেই।

তিনি সাংবাদিকদের ওয়াশিংটনের বাইরে ক্যাম্প ডেভিড অবকাশযাপন কেন্দ্র ত্যাগের সময় বলেন, “আমাদের যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।”

আগামী সপ্তাহে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই তা না হলে বিপদ আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেন তিনি।

গাজায় আরও মানবিক সহায়তার পথ উন্মুক্ত করার জন্য ইসরাইলকে “সম্ভাব্য সব উপায়” সর্বোচ্চ ব্যবহার করার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন আহ্বান জানানোর পরপরই বাইডেনের এই মন্তব্য এলো।

ব্লিনকেন ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরাইলকে নতুন সীমান্ত ক্রসিং খোলার জন্য বাইডেন প্রশাসনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। যদিও ইসরাইল তা প্রতিরোধ করে আসছে।

ইসরাইল বরাবরই কায়রো আলোচনা থেকে দূরে সরে থেকেছে। তারা যেসব জিম্মি এখনও গাজায় হামাসের হাতে আটক রয়েছে তাদের নামের তালিকা সরবরাহ না করার জন্য হামাসকে দোষারোপ করছে।

মঙ্গলবার হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদে চুক্তি না হবার পেছনে জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছেন। সেই সাথে তিনি সেই সাথে চুক্তির পদক্ষেপের ব্যাপারে চাপসৃষ্টির বিষয়টি ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

ইসরাইলের তথ্যমতে, অক্টোবরের হামলার মতো হামাসের আরেকটি হামলার আশংকা বানচাল করার অঙ্গীকার করেছে ইসরাইল। অপরদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে ইসরাইলের পাল্টা হামলায় গাজায় ৩০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। আরও আহত হয়েছেন ৭২ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি নাগরিক।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

ভয়েস অব আমেরিকার জেফ সেলডিন, মার্গারেট বেশির এবং আনিতা পাওয়েল এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন। কিছু তথ্য এপি, এএফপি এবং রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে।