ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন বাড়াতে এবং নিজস্ব প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর সদস্য দেশের নেতারা বুধবার এক শীর্ষ সম্মেলনে ওয়াশিংটনে সমবেত হয়েছেন।
এই বছরের শুরুতে নেটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠকসহ নিম্ন স্তরে কয়েক মাস ধরে এই আলোচনা চলছে। তবে এখন তাদের চূড়ান্ত চুক্তিগুলো সম্পন্ন করার বিষয়টি নেতাদের ওপর নির্ভর করছে।
নেটোর ৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার পটভূমিতে মঙ্গলবার বাইডেন শক্তির মাধ্যমে শান্তির পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন।
পুতিনকে থামাবে ইউক্রেন
তিনি দিনের শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে বাইডেন বলেন, “এটি মঙ্গলজনক যে, আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। কারণ ইতিহাসের এই মুহূর্তে আমাদের সম্মিলিত শক্তির প্রয়োজন।”
“স্বৈরশাসকরা বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে উলটে দিতে চায়, এমন ব্যবস্থা যা প্রায় ৮০ বছর ধরে চলে আসছে এবং চলছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো অশুভ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, বিশৃঙ্খলা ও দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। ইউরোপে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসন যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।”
বাইডেন বলেন, “তবে ইউক্রেন পুতিনকে থামাতে পারে এবং করবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
এই লাইন শুনে নেতারা উচ্ছ্বসিত করতালিতে ফেটে পড়েন। তারা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সরবরাহের জন্য বর্তমানে যেসব স্বতন্ত্র জাতীয় প্রচেষ্টা আছে, সেগুলকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য নেটো-সমন্বিত কর্মসূচির ভেতরে নিয়ে আসার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সম্মেলনে পাশাপাশি বসেছেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন (বাঁয়ে) আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। ফটোঃ ৯ জুলাই, ২০২৪।
মঙ্গলবার বাইডেন ও অন্যান্য নেটো নেতারা ইউক্রেনকে পাঁচটি অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর ঘোষণা দেন।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য বাইডেনের যুক্তিকে মঙ্গলবার তার প্রশাসনের অন্যান্য সদস্যরা জোরদার করেন। তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রতিরক্ষা শিল্পের নির্বাহীদের সাথে কথা বলেন এবং একটি রোমান প্রবাদ স্মরণ করিয়ে দেনঃ আপনি যদি শান্তি চান, তবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন।
নেটো মিত্ররা অস্ত্র এবং গোলাবারুদের উৎপাদন বাড়াতে এবং নিজেদের মজুদের ঘাটতি পূরণ করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ইউক্রেনের চাহিদা পূরণ এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য যা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
প্রতিরক্ষা শিল্পের নির্বাহীদের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার দেয়া বক্তব্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, আঞ্চলিক পর্যায়ে অস্ত্রের মজুদ এবং কমান্ড-অ্যান্ড-কনট্রোল ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে নেটো সদস্যরা প্রয়োজন হলে দ্রুত মাঠে নেমে যেতে পারে।
একই সাথে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের সাথে তাল মিলিয়ে নেটোর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন (বাঁয়ে) আর এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কায়া কালাস। ফটোঃ ৯ জুলাই, ২০২৪।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এটা করেছে “আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে” – যে বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে বলে প্রশাসন দাবী করছে।
তবে শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার এই প্রদর্শন দেশের ভেতরে বাইডেনের দৃশ্যমান রাজনৈতিক সমস্যা আড়াল করতে পাড়বে কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তোলা অব্যাহত রেখেছেন।
সাম্প্রতিক টেলিভিশন বিতর্কে বাইডেনের দুর্বল পারফরমেন্সের ফলে নভেম্বরের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
“নেটো জোটের জন্য আমেরিকান নেতৃত্ব কতটা গুরুত্ব বহন করে, এই ঘটনা আমাদের সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে,” বলছেন আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট-এর রিসার্চ ফেলো জিসেল ডোনেলি।
“এই জোট আমেরিকার তৈরি; এটা আমেরিকান নেতৃত্বে বেঁচে থাকে এবং উন্নতি করে। এবং আমেরিকান নেতৃত্ব আর নেতাদের নিয়ে যখন সন্দেহ হয় ... যখন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ঠাণ্ডা লাগে, তখন নেটোর নিউমোনিয়া হয়,” তিনি বলেন।