ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর মিছিলে বাধা দেওয়ায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
শুক্রবার (৭ মার্চ) দুপুরে জুমার নামাজের পর ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে মিছিলটি বের করে সংগঠনটি। এতে অংশ নেয় সংগঠনের অসংখ্য সদস্য।
একপর্যায়ে তাদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে সে বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরুতে লাঠিচার্জ এবং একপর্যায়ে পুলিশকে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিছিলে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। তবে পুলিশ দ্রুত তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্রিয় হলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ ও সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এদিন সকাল থেকেই নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনটির দেওয়া ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি ঘিরে বায়তুল মোকাররম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেয়।
আগের দিন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী, নিষিদ্ধঘোষিত যেকোনো সংগঠনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ ও অন্য উপায়ে প্রচারণাসহ সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠন সভা, সমাবেশ ও যেকোনো উপায়ে প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
হিযবুত তাহরীর
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে ধর্মভিত্তিক এই সন্ত্রাসী সংগঠন হিযবুত তাহরীর। তাদের মূল লক্ষ্য ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও শরিয়া বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসা সংগঠনটি এখন অনেকটা প্রকাশ্যে তাদের কাজ চালাচ্ছে। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই ঢাকায় মিছিল করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এরপর আরও নানা দাবিতে মিছিলের পাশাপাশি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনও করেছে সংগঠনটি। চট্টগ্রামেও পালন করেছে নানা কর্মসূচি।
সংগঠনটির মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিম বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সরকার পতন আন্দোলনে শুরু থেকেই তাদের কর্মীরা অংশ নেয়; তবে তারা কোনো ব্যানার ব্যবহার করেনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ গুঁড়িয়ে হিযবুত তাহরীরের পোস্টারও লাগানো হয়েছিল।
২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হিযবুত তাহরীর। সংবাদ সম্মেলনে হিযবুত তাহরীরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানায় সংগঠনটির নেতারা।
তৎকালীন সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯–এর অধীনে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আবেদন করা হয়েছে বলে ৯ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। জার্মানি, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক ও পাকিস্তানে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।